Blog & News

Official blog of Bangladesh Open Source Network

গার্লস ইনোভেশন ক্যাম্পের দুই উদ্যোমী তরুণীর স্বপ্নের উদ্যোগ এখানেইকিনি ডট কম এবার ই-উদ্যোক্তা হাটে

২০১৭ সালে বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্কের (বিডিওএসএন) উদ্যোগে আয়োজিত প্রথম পাইলট গার্লস ইনোভেশন বুটক্যাম্প থেকে উদ্যোক্তা হবার পথে পা বাড়ানোর সাহস পায় উম্মে হানি এশা। এরপর থেকেই স্বল্প পরিসরে শুরু হয় তার অনলাইন ব্যবসার টুকিটাকি। গার্লস ইনোভেশন বুটক্যাম্প থেকে প্রাথমিক ধারণা নিয়ে চলতে থাকে তার একার উদ্যোগ। কিন্তু বেশীদিন একা হাল ধরতে হয়নি তাকে। সাথে সহযোদ্ধা হিসেবে পাশে পান নিজের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দুইজন সহপাঠীকে। এরপর পুরোদমে চলতে থাকে তিনজনের এখানেইকিনি ডট কম-এর কার্যক্রম। এ বছর বিডিওএসএন এর চাকরি খুঁজব না চাকরি দেবো গ্রুপের ই-উদ্যোক্তা হাটে অংশ নিয়েছেন তারা।

new

২০১৭ সালে শুরু করলেও এই উদ্যোগের ভীত নিয়ে খুব একটা সন্তুষ্ট ছিলেন না উম্মে হানি এশা। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই কিছুটা ঝিমিয়ে যায় তাদের কাজ। বুঝতে পারে কিছুটা সংগঠিত সিদ্ধান্তের অভাবে উদ্যোগ থেকে লাভের খাতায় খুব বেশী কিছু যোগ করতে পারছেনা তারা। তবুও থেমে যায়নি তাদের পথচলা। ২০১৯ সালে সহকর্মী ওমরা হক আনিকা কে সাথে নিয়ে যোগ দেন বিডিওএসএন এর ইএসডিজি প্রকল্পের উদ্যোগে আয়োজিত দ্বিতীয় গার্লস ইনোভেশন বুটক্যাম্পে। উদ্দেশ্য- নিজেদের ভুলগুলো চিহ্নিত করে উদ্যোগকে আরো কিছুটা সুসংগঠিত করার মাধ্যমে এক ধাপ এগিয়ে নেয়া। উদ্যোগের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা, ডকুমেন্টেশন, বাজার চাহিদা নিরীক্ষণ, পণ্যের মূল্য নির্ধারণ ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এর উপর পূর্ণাঙ্গ ধারণা নিয়ে আবার কাজে লেগে পড়েন। কেউ গ্রাহক চাহিদা নিরুপণ করে উদ্যোগের জন্য পণ্য নির্ধারণ করছেন, তো কেউ বাজার যাচাই করে পণ্য মজুদ করছেন আবার কেউ দায়িত্ব নিয়ে তা পৌঁছে দিচ্ছেন গ্রাহকের দোরগোড়ায়। এভাবেই ছোট পরিসরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নিত্য দিনের প্রয়োজনীয় জিনিস সরবরাহ করছে এখানেইকিনি ডট কম। কে কোন কাজের দায়িত্ব পালন করছেন জানতে চাইলে উম্মে হানি এশা জানান, ‘আমি মূলত গ্রাহক এর সাথে যোগাযোগের কাজটা করে থাকি, ওমরা পণ্যের বাজারদাম যাচাই করে তা মজুদ করা এবং মূল্য নির্ধারণের কাজ করে থাকে এবং আমাদের আর এক বন্ধু ওয়াহেদ নুর আমাদের উদ্যোগের ব্র্যান্ডিং, ওয়েবসাইট তৈরী এবং আপডেট, উদ্যোগরের প্রচারণামূলক ভিডিও তৈরী সহ প্রযুক্তিগত খুঁটিনাটি দেখাশোনা করেন। তবে আমরা প্রয়োজন ভেদে নিজেদের কাজগুলো ভাগ করে নেয়ার চেষ্টা করি। এতে করে কারো উপর খুব বেশী চাপ পড়ে না। সবাই আন্তরিকতা দিয়ে নিজের দায়িত্বটুকু পালন করতে পারি। এই আন্তরিকতার কারণের এখানেইকিনি ডট কম আমাদের তিন জনের পরিবার যেখানে রোজ কেউ না কেউ অতিথি হয়ে আসেন। আমরা আমদের আন্তরিকতা দিয়ে তাদের প্রয়োজন মিটানোর চেষ্টা করছি‘।  

গৃহস্থালী প্রয়োজনীয় বিভিন্ন সরঞ্জামাদি সরবরাহ করে এখানেইকিনি ডট কম। এর পাশাপাশি সময়ের চাহিদার সাথে তাদের পণ্যের ধরণেও পরিবর্তন আসে কিছুটা। এই যেমন করোনা ক্রান্তিকালে এখানেইকিনি ডট কম কাজ করেছে স্বাস্থ্যসম্মত মাস্ক নিয়ে। গেলো আমের মৌসুমে সারাদেশে আম সরবরাহের কাজও করেছেন তারা। ই-উদ্যোক্তা হাটে তাদের অভিজ্ঞতার কথা জানতে চাইলে ওমরা জানান, করোনার প্রকোপে আমাদের কাজ যখন অনেকটাই হূমকির মুখে পড়েছে তখন এই ই-উদ্যোক্তা হাট আমাদের সামনে অমিত সম্ভাবনার দরজা খুলে দিয়েছে। ই-উদ্যোক্তা হাটের মাধ্যমে এখানেইকিনি ডট কম এখন অনেকের কাছেই পরিচিতি পেয়েছে। দৈনিক পত্রিকায় আমাদের উদ্যোগের লোগো সহ খবর ছাপানো হয়েছে যা আমাদের এই ছোট্ট উদ্যোগের জন্য অনেক বড় একটা সুযোগ ছিলো। দেশের বড় বড় বেশ কিছু উদ্যোগের সাথে আমাদের উদ্যোগটি জায়গা করে নিতে পেরেছে। এটা আমাদের জন্য অনেক আনন্দের”। উম্মে হানি এশা একমত পোষণ করে জানান, ই-উদ্যোক্তা হাটের কারণে আগের চেয়ে এখন অনেক মানুষ্ আমাদের কাছে তাদের প্রয়োজন নিয়ে আসছেন। আমাদের পণ্য নিয়ে কৌতূহল প্রকাশ করছে। বেশ ভালো একটা সাড়া পাচ্ছি। এবং এর অনেকটাই অবদান গার্লস ইনোভেশন বুটক্যাম্পের। সেখান থেকেই আমরা শিখেছি কিভাবে গ্রাহক ধরে রাখতে হয়, ভালো মানের পণ্য সরবরাহ এবং নির্ধারিত সময়ের মাঝে পণ্যে পৌঁছানোসহ কিভাবে সহজ লেনদেনের মাধ্যমে তাদের আস্থা অর্জন করতে হয়। ই-উদ্যোক্তা হাট আমাদের সেসব কিছুর বাস্তবিক প্রয়োগের একটা বড় সুযোগ করে দিয়েছে”।

116372129 292436598533644 2908847246576885324 n

উদ্যোগের তিনজনই ঢাকার একটি কলেজে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিষয়ে স্নাতক পড়ছেন। তাদের স্বপ্ন একদিন এখানেইকিনি ডট কম প্রযুক্তির ছোঁয়ায় মানুষের কেনাকাটা কে আর সহজ করে দেবে। এশা বলেন, প্রযুক্তি কে সাথে  নিয়ে এমন উদ্যোগ শুরু করার প্রেরণা পেয়েছি ক্লাউডক্যাম্প বাংলাদেশ এর প্রতিষ্ঠাতা এবং এমাজন ওয়েব সার্ভিসে কর্মরত মোহাম্মাদ মাহাদী-উজ-জামান স্যারের কাছে। তিনি আমাদের প্রথম ইনোভেশন বুটক্যাম্পের মেন্টর ছিলেন। একদল ছেলেমেয়েকে নিয়ে স্মার্ট স্ক্রিন বিজনেস তৈরীর জন্য কাজ শুরু করেছিলেন। সেই দলে আমিও ছিলাম। কিন্তু ব্যাক্তিগত কারণে দলছুট হয়ে পড়ি আমি। কিন্তু আমি এখনো স্বপ্ন দেখি অটোমেশনের এই যুগে আমাদের এই উদ্যোগ একদিন সয়ংক্রিয় হয়ে যাবে। হিসাব রাখা, লেনদেন প্রক্রিয়া, পণ্য পৌছানো, ডকুমেন্টস তৈরী করা এমন সব কাজ সয়ংক্রিয়ভাবে হবে। যদিও সে পথে হাটতে অনেকটা সময় প্রয়োজন তবুও আমরা চেষ্টা করে যাবো। প্রাথমিকভাবে এখন আমরা সমস্ত লেনদেনের কাজের স্বচ্ছতা রাখতে আমাদের ওয়েবে তাৎক্ষনিক সেটার আপডেটসহ গ্রাহককে সমস্ত তথ্য প্রদানে গুরুত্ব দিচ্ছি। এবং এতে অনেকে আমাদের উপর আস্থা নিয়ে আবার আসছেন।

ইনোভেশন ক্যাম্পের কথা ওঠায় ওমরা হক আনিকা যোগ করেন, গার্লস ইনোভেশন বুটক্যাম্প ছিলো আমাদের উদ্যোগের একটি মাইলফলক। যেটা আমাদের এই বন্ধুর পথে নির্দেশনা হিসেবে কাজ করেছে। এখানে একই প্ল্যাটফর্মে মিলিত হয়েছিলেন সারাদেশের এমন অনেক মেয়ে যারা উদ্যোক্তা হতে চান। অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেয়ায় একেক জনের কাছে শেখার সুযোগ ছিলো বেশ। এছাড়াও আমাদের জন্য যেসব সেশন ডিজাইন করা ছিলো তা ঠিকভাবে আয়ত্ব করে নিলে একজন উদ্যোক্তাকে আর কখনো পিছনে ফিরে তাকাতে ইচ্ছে করবেনা। ফাইন্যান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট, পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং, বিজনেস প্ল্যান তৈরী ইত্যাদি সেশন গুলো ছিলো অসাধারণ। এছাড়া একমাত্র এই প্ল্যাটফর্মে এসেই আমি মালিহা কাদির, স্বপ্না ভৌমিক, সৈয়দা নাবিলা মাহবুব, মাহমুদুল হাসান সোহাগ ছাড়াও অনেক সফল এবং প্রতিষ্ঠিত উদ্যোক্তার অভিজ্ঞতা সামনে বসে শোনার সুযোগ পাই। এটা ছিলো আমার জন্য একটা অভাবনীয় সুযোগ।

উদ্যোগকে নিয়ে ভবিষ্যত পরিকল্পনা শুনতে চাইলে দুজনেই বেশ উচ্ছসিত হয়ে বলেন, আমাদের তিনজনেরই ইচ্ছে আমাদের এই উদ্যোগটি ভবিষ্যতে মানুষের জীবনকে আরো সহজ করে দেবে। কেনাকাটা করতে দোকান ঘুরে ঝক্কি পোহানোর চেয়ে আমাদের এই একটি প্ল্যাটফর্ম যেনো তাদের দৈনন্দিন জীবনের সকল সমস্যার সমাধান করে দেয়। আমরা মানুষের চাহিদা নিয়ে গবেষণা করছি যা রুটিনমাফিক চলতে থাকবে। তাদের প্রয়োজন বুঝে আমরা প্রতিনিয়ত আমাদের আরো নির্ভরযোগ্য করে গড়ে তুলব।

শেষ মূহুর্তে নিজেদের অপর সহকর্মী ওয়াদের নূরের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতেও ভোলেননা এই দুই উদ্যোক্তা। তারা বলেন, ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে নারীরা আজ নিজেদের অর্থনৈতিক নির্ভশীলতার জন্য এক কথায় যুদ্ধ করছেন। সাইবার বুলিং এড়িয়েও অনলাইনের এই বিশাল ক্ষেত্রে আমরা একটি উদ্যোগকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করছি। একদিকে আমরা যেমন অসহযোগী কিছু পুরুষের সাইবার বুলিং এর শিকার হচ্ছি ঠিক অপরদিকেই আমাদের এই সহকর্মী আমাদের সমাজের ভালো দিকটি দেখাচ্ছে। তার সহযোগিতায় আমরা এগিয়ে যেতে পারছি।

সমাজের সকলকে নারীর এই যুদ্ধে সহযোগী হবার আহবান জানান এই দুই উদ্যোমী তরুণী।