Blog & News

Official blog of Bangladesh Open Source Network

নেটওয়ার্কিং উইথ সিইও - ২য় পর্ব

সাধারণত কোনো কোম্পানিতে কিভাবে নিয়োগ দেওয়া হয় বা কিভাবে নেটওয়ার্ক তৈরি করতে হয় সেসব বিষয় নিয়ে একটি অনলাইন ওয়েবিনার আয়োজন করে বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্ক-বিডিওএসএন। গত ১০ নভেম্বর এই ওয়েবিনারে অংশ নেন, ডিভাইন আইটি লিমিটেড এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর ইকবাল আহমেদ এফ. হাসান, স্কাইলার্ক সফট লিমিটেড এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর এবং সিইও বি এম শরীফ এবং ইনোভেটিভ আর্টিফ্যাক্ট এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর নুসরাত জাহান। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বিডিওএসএনের সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসান।

124572964_3438385066209838_8601183805103494904_o.jpg

মুনির হাসান: আমাদের দেশের মেয়েরা যারা সিএস এ নিয়ে পড়ালেখা করে এবং তাদের রেজাল্টও ভালো কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা চাকরিতে যোগ করে না বা মানিয়ে নিতে পারে না এবং একসময় গিয়ে হতাশ হয়ে পড়ে। আজকের মুল উদ্দেশ্য হলো আমাদের মেয়েদের ঘাটতি কোন জায়গায় সে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা। পড়ালেখার বিষয়ে তারা পিছিয়ে না কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে তাদের কার্যক্রম খুবই কম। আজকের অনুষ্ঠানে এসব থেকে বের হয়ে আসার একটা রাস্তা আমরা খুঁজে বের করবো এবং তারা কখন থেকে চাকরি খোঁজা শুরু করবে বা কিভাবে করবে তা নিয়ে আলোচনা করবো।

 

রাসেল: আমি কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে পড়াশুনা করেছি আইএসটি থেকে। ১৯৯৬ থেকে ১৯৯৯ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত। পড়াশুনার পাশাপাশি আমি ছাত্রজীবনে ব্যবসা এবং চাকরি করেছি। পড়াশুনা শেষে চাকরি করলাম। কিছুদিন কন্সালটেন্ট ছিলাম এরপর আমি স্থায়ী একটা চেয়ারে বসার চিন্তা শুরু করি। ৭-৮ বছর আমি বেশ রেন্ডমলি কাজ করি। স্টুডেন্ট লাইফে ছেলেরা বেশি টাকার অভাবের সম্মুখীন হয় যেটা আমিও করেছি এবং চিন্তা করতাম আমি কিভাবে এটাকে জয় করবো। এ চিন্তা থেকে কখন যে ব্যবসায়ী হয়ে গেলাম বুঝতেই পারিনি। ডিভাইন আইটির পথচলা ২০০৫ থেকে শুরু এবং অক্টোবরে লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে রেজিস্ট্রেশন করি। সে হিসেবে ১৫ বছর ধরে আমরা একটা অফিশিয়াল কোম্পানি। তখন কি প্রতিষ্ঠান হিসেবে শুরু করবো সেটা নিয়েও একটু চিন্তিত ছিলাম। অনেক বিষয় ছিল কিন্তু আমি সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট প্রতিষ্ঠান হিসেবে শুরু করবো। ইন্টারন্যাশনাল এবং লোকাল অনেক প্রতিষ্ঠানের সাথে কথা বলে এবং পরামর্শ চাই কিভাবে একটি সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট প্রতিষ্ঠান শুরু করবো। সেখান থেকে অনেকগুলো আইডিয়া পাই। অনেক গবেষণার পর আমরা সিদ্ধান্ত নেই যে ছোট টিম করে হলেও শুরু করবো। তখন ইন্টারভিউ নিয়েছিলাম ৩০০ জনের। সারাদিনে একজনকেও নিয়োগ দিতে পারিনি। কিন্তু এখন অনেক পাওয়া যায়। রিক্রুট করার সময় আমরা ইউনিভার্সিটি দেখি না কিন্তু আমি স্কুল কলেজটা দেখি। আমরা দেখি প্রবলেম সল্ভিং এর কোনো রেকর্ড আছে কিনা। সেখানে থেকেই আমরা ২০-৪০ জন টেনে নিয়ে আসি। পরে বাকি বেসিক জিনিসগুলোর দিকে নজর দেই। এরপরের ধাপে আমরা গল্প করি, কনফিডেন্স লেভেল চেক করি। তাদের সাহসিকতা যাচাই করি। পাশ করে বের হওয়ার পর আমরা অন্যকে জিজ্ঞেস করি কি করতে হবে। কিন্তু আমার মতে আমাদের উচিত নিজেকে জিজ্ঞেস করা আমার কি করা উচিত। সি এস একটা বিশাল বিষয়। এখানে সবাই মোটামুটি একটা পছন্দের বিষয় পেয়ে যাবে। কখনো যদি সুযোগ পাও আমার অফিসে চলে এসো আমি তোমাদের কিছু প্রশ্ন করবো এবং এর মুল উদ্দেশ্য হলো তোমাদের সাহসটা বাড়ানো। নিজেকে প্রশ্ন করো তুমি কি করতে চাও। বের হওয়ার আগে আমাদের একটু সেলফিস হওয়া উচিত। হোক সেটা টাকার জন্য, শেখার জন্য বা শুধু মজার জন্য। আমার কিছু অর্জন করতে হবে, শিখতে হবে সেটাই লক্ষ্য হওয়া উচিত। তোমরা মনে কর কর্পোরেটে কোনো মজা নেই। কিন্তু কর্পোরেটে মজাটা অন্যরকম। তোমরা এটাতে নিজেদেরকে সম্পৃক্ত করো। প্রত্যেক প্রতিষ্ঠান কিন্তু তার প্রফেশনালদের ট্রেইনিং করায়। এটা কোন ক্লাসরুম ট্রেইনিং না কিন্তু মজার ব্যাপার হলে তুমি একটা ১০-৪০ বছরের অভিজ্ঞতার একটা মানুষের সাথে সরাসরি কথা বলছো। তাদের প্রেক্ষাপট বা তাদের মতামত সম্পর্কে জানতে পারবে। আমার মতে কোনো সফটওয়্যার কোম্পানির শীর্ষ কর্মকর্তা গম্ভির কথাবার্তা বলেন, এখন কিন্তু এসব বিষয় অনেক সহজ হয়ে গিয়েছে। ২০০৭ সালে প্রথম একজন নারী আমাদের প্রতিষ্ঠানে যোগ দেন তাকে আমি অনুরোধ করি আমাদের পুরো অফিসটা ঘুরে দেখার। তিনি এসে আমাকে বলেন অফিসে কোনো মেয়ে নেই আর মেয়েদের জন্য কোনো রেস্টরুমও নেই। ঐ দিনই আমি রেস্ট্রুমের ব্যবস্থা করি মেয়েদের জন্য এখন আমাদের অফিসে মেয়েদের জন্য প্রেয়ার রুম আছে। কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানে চাইল্ড কেয়ারও পাওয়া যেতে পারে। এখন ২ থেকে ৪ হাজার প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। একটু সাহসি হলেই কিন্তু ঘরের পাশেই ভালো একটা সুযোগ পাওয়া যেতে পারে।

 

মুনির হাসানঃ মুল কথা হলো আগের তুলনায় বর্তমানে সুযোগ অনেক বেশি। শরীফ যদি নিয়োগের ব্যাপারে অন্যান্য তথ্য কিছু বলতেন।

 

বি এম শরিফঃ ২০১২ তে গ্রেজুয়েশন শেষ করার পর আমার প্রথম ইন্টারভিউ ছিলো রাসেল ভাইয়ের কোম্পানিতে ডিভাইন আইটি নিয়ে। ২য় ফেজেই ঝরে পড়েছিলাম। তো বিষয়টা হচ্ছে, রিক্রুটমেন্ট এর ক্ষেত্রে ছেলেমেয়ে তেমন একটা ব্যাপার না। বিশ্ববিদ্যালয় দেখি কিনা তা সম্পর্কে বলতে গেলে আমরা আসলে রিক্রুটমেন্ট এর ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় দেখি না। আমাদের প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে বলি স্কাইলার্ক ২০১২ তে যাত্রা শুরু করে। প্রথমদিকে আমরা লোকাল মার্কেট এবং বাইরে আউট সোর্সিং করতাম। যে কাজ পেতাম তাই করতাম। আস্তে আস্তে ভাবলাম আমাদের ক্ষেত্রটা ঠিক করতে হবে। একটা বিজনেসকে পরের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া কিন্তু কঠিন একটা ব্যাপার। কারণ গার্মেন্টস সেক্টরে বিষয়গুলো সব বিক্ষিপ্ত অবস্থায় থাকে। এক্ষেত্রে আমাদের সার্ভিস বর্তমানে অনেক স্টেবল। যেহেতু গার্মেন্টস সেক্টর নিয়ে কাজ করি সেহেতু আমাদের বিভিন্ন সেক্টর নিয়ে কাজ করতে হবে। যেমন, টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার ইত্যাদি। আমরা ৩ দফা বা ৪ দফায় নিয়োগ করি। অনেকে ১ম বা ২য় দফায় আবেদনকারীদের ফলাফল জানিয়ে দেয় কিন্তু আমরা সেটা করি না কারণ এখানে আসলে অনেক কিছু বিচার করার ব্যাপার রয়েছে আর একজন আবেদনকারিকেও বোঝাতে হয় যে সে এটা অর্জন করেছে।   

ফাইনাল ইয়ারে এসে শিক্ষার্থীরা চিন্তায় পড়ে যায় কিছু একটা করতে হবে। তাদের জন্য বলি তোমাদের কনফিডেন্স বাড়াতে হবে। সবাই মনে করে এতোদিন কিছু করতে পারলাম না এখন কি করবো। অনেক মানুষ শুধু অন্যদের বক্তব্য শোনে কিন্তু কিছু করে না। তোমার উচিত তুমি কি করবে তা আগে নির্ধারণ করা। তারপর এগিয়ে যাও। এখন এগিয়ে যাওয়ার পর চাকরির ক্ষেত্রে আসি। দেখা যায় অনেক ইন্টার্নি যোগ দেয় কিন্তু কিছু দিন পর হারিয়ে যায়। সে ওই সময়ে কিছু একটা শিখতে পারে তাহলে সেটা তাকে তার চাকরির ক্ষেত্রে সাহায্য করবে। সাধারণত যদি কোনো ইন্টার্ন তার ভালো কাজ দেখায়, প্রতিষ্ঠান তাকে ছাড়তে চায় না। তাকে রেখে দিতে চায়। প্রথম চাকরির বেতন তো বেশি হয় না তাই অনেকেই মনে করে কিছুদিন চাকরি করে কিছু শেখার পর সে চাকরি পরিবর্তন করবে। পরিবর্তন  করলে তার বেতনটা বেড়ে যাবে। এভাবে জব পরিবর্তন করলে আসলে স্থায়ী হওয়া যায় না। প্রথম কাজের প্রতি যদি সবাই কর্মনিষ্ঠ হয় তাহলে আপনার ভবিষ্যত নিয়ে আর চিন্তা করতে হবে না। একটু সেলফিস হতে হবে। আমরা আসলে সবাই স্বার্থপর। আমরা যদি স্বার্থপর না হলে আমরা ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে পারবো না এবং আপনাদের জন্য চাকরির ক্ষেত্র সৃষ্টি  করতে পারবো না। আমি যদি ভালো থাকি এবং আমার কোম্পানি যদি ভালো থাকে তাহলে ৫০ জন মানুষ ভালো থাকবে এবং ৫০ টা পরিবার ভাল থাকবে।

 

মুনির হাসান: অনেক সফটওয়্যার ফার্মে নিবন্ধন প্রক্রিয়া বেশ দীর্ঘ। একটি ফর্ম পূরন করতে হয় যেখানে প্রায় ৫০ মিনিটেরও বেশি সময় প্রয়োজন। এই সময়টা আসলে একটা ধৈর্য্য পরীক্ষা যা একজন প্রার্থীকে এক ধাপ এগিয়ে নিতে সাহায্য করে। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ক্রাইটেরিয়া, সকল চাকরি প্রার্থীদের উচিত এই সম্পর্কে খেয়াল রাখা।

আমাদের ইন্টার্নশিপের একটি প্রোগ্রাম রয়েছে, যেখানে আমরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগের মাধ্যমে মেয়েদেরকে চাকরির সুযোগ করে দেই। এখন অবশ্য করোনার কারণে এই প্রোগ্রাম বন্ধ রয়েছে। কিছুদিন আগে আমরা কয়েকজনকে একটা কোম্পানিতে রেফার করেছিলাম যেখানে ইন্টার্নশিপের বিষয়টা ফাইনাল করা ছিলো। প্রার্থীদেরকে শুধু মাত্র এইচ আর এর সাথে মৌখিক একটা পরীক্ষা দিতে ওখানে পাঠানো হয়েছিলো। দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেদিন সেই অফিসের এইচআর সকাল থেকে অনুপস্থিত ছিলেন এবং তিনি অফিসে পৌঁছান দুপুর ১টার সময়। তখন কোনো প্রার্থীর সাথেই তার আর দেখা হয়নি, কারণ তারা সবাই বাসায় চলে গেছে। এই ছোট ছোট জায়গাগুলোতে নিজের ধৈর্য্যের পরীক্ষা দেওয়াটা খুবই জরুরী। 

রাসেল এবং শরিফ এর কথার সাথে মিলিয়ে একটা কথা বলি, যেকোনো অফিসে কাউকে কয়েক ধাপে ইন্টারভিও এর জন্য ডাকার কারণটা আসলে কি! প্রধান কারণ হচ্ছে তারা দেখতে চায় তোমার মধ্যে কাজ করার ইচ্ছা শক্তি আছে কিনা সেটা যাচাই করে নেওয়া। ঠিক যখন একজন সকল ধাপে সফল হয়ে একটা কোম্পানির সদস্য হয়ে যায়, তখন তাকে কাজ শেখানো কিংবা তার জন্য সময় ব্যয় করার জন্য সবাই কম-বেশি প্রস্তুত থাকে। তবে সেই সময় ব্যয় করাটা আসলে যোগ্য লোকের জন্য কিনা সেটা বুঝে নিতেই এতগুলো ধাপে পরীক্ষা নেয়া হয়। 

১৯৯০ সাল, আজ থেকে প্রায় ৩০ বছর আগে যখন আমরা চাকরির জন্য আবেদন করা শুরু করেছিলাম, তখন এই আবেদন পদ্ধতি এতটা সহজ ছিলোনা। তখন আমাদের কিছুটা খাটনি পোহাতে হতো। যেমন- সেই সময়ে আমাদের কারোর নিজস্ব কম্পিউটার ছিলোনা, কাজেই কোথাও আবেদন করতে হলে যেতে হতো নিলক্ষেত। সেখানে গিয়ে একটা দরখাস্ত টাইপ করে লিখতে হতো এবং তারপরে টাকা দিয়ে প্রিন্ট করে নিয়ে আসতে হতো। এরপরে কাগজের দরখাস্ত নির্দিষ্ট ঠিকানায় গিয়ে জমা দিতে হতো, কারণ তখন অনলাইনে পাঠানোর কোনো পদ্ধতি ছিলোনা। তার মানে হচ্ছে, আমরা এই কাজগুলো করতে গিয়ে অলরেডি কিছুটা এনগেইজ হয়ে যেতাম ফলে চাকরির পরীক্ষা এখনকার মতো অতটা দীর্ঘ হতনা।

বর্তমানে এই রকম কোনো ঝামেলা নেই। এখন অনেক ওয়েবসাইট আছে যেখানে একটা ক্লিক করলেই সিভি নির্দিষ্ট অফিসে চলে যায়। কোনো রকম ভোগান্তি পোহাতে হয়না কাউকে। এজন্য শুধুমাত্র সিভি দেখে কোনো কোম্পানি নিশ্চিত হতে পারেনা প্রার্থী সম্পর্কে। তারা বুঝতে পারেনা, যে আবেদন করছে সে কি আসলেই যোগ্য নাকি শুধুমাত্র চোখের সামনে বিজ্ঞাপন দেখেছে তাই আবেদন করেছে। 

আমি এইসকল বিষয়ে এবার নুসরাত এর কাছে জানতে চাই যে, ওদের কোম্পানিতে নিয়োগ পদ্ধতি কেমন? কিভাবে ওরা যোগ্য ব্যক্তিকে বাছাই করে নেয়?

নুসরাত জাহানঃ আমিও আসলে রাসেল ভাই এবং শরিফ ভাইয়ের মতো বলবো যে আমরা বেশ দীর্ঘ একটা নিয়োগ পদ্ধতি অনুসরন করে এবং যেটা কয়েকটি ধাপে হয়ে থাকে। এই কয়েক ধাপের মধ্যে অনেক রকম পরীক্ষা থাকতে পারে যেমন- লিখিত, মুখোমুখি প্রশ্নোত্তর পর্ব কিংবা অনলাইন কোনো পরীক্ষা। এছাড়া, আমরা অনেক সময় পোর্টফোলিও দেখতে চাই, যদিও সেটা অভিজ্ঞদের ক্ষেত্রে। তবে অনেক পোস্ট এর জন্য ফ্রেশারদেরও পোর্টফলিও দেখতে চেয়ে থাকি, কেননা অনেকেই ছাত্র জীবন থেকেই অনেক রকম কাজের সাথে জড়িত থাকে যেগুলো তাদের পোর্টফোলিওতে দেখতে পাই আমরা। যেমন কম্পিউটার সায়েন্স এর স্টুডেন্টদের অনেক রকম প্রজেক্ট করতে হয়। সেসব প্রজেক্ট গুলোতে তারা ঠিক কতটুকু ভালো করেছে কিংবা এগুলো আদৌ তারা নিজেরাই করেছে কিনা এসব আমরা একটু যাচাই করে নেই। 

এছাড়া নিয়োগ এর ক্ষেত্রে আমরা কিছু এসাইনমেন্ট দিয়ে দেই এবং একটা সময় সীমা বেধে দেই। এগুলো অফিসে বসেই করতে হবে এরকম না, যেকোন যায়গায় বসেই এই কাজ কমপ্লিট করে দেয়া যাবে। এর পরে সেই এসাইনমেন্ট এর উপরে ভিত্তি করে আমরা কয়েকজনকে বাছাই করি এবং তাদেরকে মুখোমুখি ইন্টারভিউ এর জন্য ডাকি। 

আমরা মূলত কাজ করি অগমেন্টেড রিয়্যালিটি, ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি এবং এমবেডেড সিস্টেম নিয়ে। তো আমাদের নিয়োগ দেয়ার সময় এআর-ভিআর নিয়ে কাজ করে বা আগে কখনো কাজ করেছে  এরকম ফ্রেশার পাই না। মাঝে মাঝে এরকমও হয়, যে একজন কম্পিউটার সায়েন্স স্টুডেন্ট কে যখন জিজ্ঞেস করি এআর-ভিআর নিয়ে তখন দেখি যে অনেকে এর সম্পর্কে কিছুই জানেনা, যেটা খুবই আবাক করার মতো বিষয়। কারণ এই বিষয়গুলো ইমারজিং টেকনোলজির অংশ যেটা জানা খুবই গুরুত্বপূর্ন।  

এখন ছাত্র-ছাত্রীরা কোনো কিছু জানা না থাকলেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে দোষারোপ করে। এটা আমার কাছে খুবই অযৌক্তিক বলে মনে হয়। কারণ হচ্ছে, আমি কিংবা আমার বন্ধুরা ছাত্রজীবনে প্রাতিষ্ঠানিক বিষয় ছাড়াও আর অনেক বেশি বিষয় সম্পর্কে জানতাম। কেননা শেখার সুযোগটা এখন অনেক বেশি। বর্তমানে এমন কোন রিসোর্স নেই যেটা অনলাইন মাধ্যমে পাওয়া যায়না। সবার ক্ষেত্রে এখন আসলে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলার ব্যপারটা বাড়াতে হবে। এই প্রবণতাটা আমি ছেলেদের ভিতরে কিছুটা দেখলেও মেয়েদের ভিতরে একেবারেই দেখিনা। 

রাসেল ভাইয়ের কথা থেকে আমি দুইটা পয়েন্ট পিন করে রেখেছি, সাহসি এবং মাল্টিন্যাশলান। সাহসী-র ব্যাপারে আমি আমার একটা গল্প বলবো। আমাদের সর্বশেষ যে ইন্টারভিও হয়েছিলো সেখানে রাসেল স্যার উপস্থিত ছিলেন এবং সেখানে মুনির স্যার-ও কিছু মেয়েদের রেফার করেছিলেন। সেইদিন মেয়েরা যারা এসেছিলো, ওরা তাদের বাবা-মায়ের সাথে এসেছিলো। এখানে তদের দোষের কিছু হয়নি, তবে এখানে তাদের সাহসের অভাব বুঝা যাচ্ছে। আর মাল্টিন্যাশনালের বিষয়ে বলবো যে, অনেকেই এইরকম চাকরির জন্য দীর্ঘদিন অপেক্ষা করে তবে তাতে কিছু লাভ হয়না। বরং সময়টা নষ্ট হয়। এই সময়টা খুবই গুরুত্বপূর্ন একটা পয়েন্ট। কেননা যখন কেউ চাকরির জন্য আবেদন করে তখন, সে কতদিন আগে পাশ করেছে, এর পরে সে কি কোন চাকরি কিংবা ইন্টার্নশিপ করেছে কিনা ইত্যাদি জিনিস গুলো-ও আমরা যাচাই করে থাকি। তাই এই বিষয়ে আমি বলবো, স্টুডেন্টদের পড়াশোনা শেষ করার পরে বসে না থেকে যেকোন ধরনের চাকরি কিংবা ইন্টার্নশিপ করা উচিত এবং স্যালারির বিষয়ে গুরুত্ব না দিয়ে অভিজ্ঞতার বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া উচিত। কেননা এটাই সব থেকে প্রথম যাচাই করা হয় একজন প্রার্থী নির্বাচন এর ক্ষেত্রে যে- সে কতটা অভিজ্ঞ হতে পেরেছে। 

মুনির হাসান: আমার একটা ছোট প্রশ্ন আছে তোমাদের তিন জনের কাছে। করোনা কালে তো সব কিছুই প্রায় বন্ধ হয়ে যাবার উপক্রম হয়েছিল। তার মধ্যে যে তোমরা ইন্টারভিউ বা এসাইনমেন্ট দিয়ে প্রার্থী নির্বাচন করেছ, সেই এসাইনমেন্টে তোমরা কোন বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিয়েছ? এই পদ্ধতিটা আসলে কিরকম? আমরা যেমন গণিত অলিম্পিয়াডে একটা এসাইনমেন্ট দিয়ে দেই এবং দেখি যে কে কতটা চেষ্টা করেছে। তোমাদের এই এসাইনমেন্ট এর যাচাই পদ্ধতি আসলে কেমন? কে কতটা সমাধান করতে পারলো এটা দেখো নাকি কে কতটা চেষ্টা করলো সেটা দেখো? 

ইকবাল আহমেদ এফ. হাসান (রাসেল): আমরা আসলে আমাদের কিছু প্রশ্ন ট্রিকি রাখি। লিখিত পরীক্ষায় কেউ অনেক বেশি নম্বর পায় কিন্তু ট্রিকি প্রশ্নগুলোর উত্তর যদি না দেয় তাহলে আমরা আসলে ওদেরকে ডাকিনা। আমরা দেখি আমাদের সেই বাছাই করা কিছু প্রশ্নের উত্তর করেছে কিনা! কেউ যদি সেই প্রশ্নগুলোর অর্ধেক বা তারও কম উত্তর করে থাকে তাহলেও আমরা ওই প্রার্থীদেরকে সুযোগ দিয়ে থাকি। কেননা তারা চেষ্টা করেছিলো এবং নুন্যতম হলেও তাদের চিন্তা শক্তিকে ব্যবহার করেছে। আমাদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে এটা যাচাই করা যে, একজন প্রফেশনাল ঠিক কতটা আগ্রহ বা ইচ্ছা আছে প্রব্লেম সল্ভিং এর জন্য। 

বি এম শরীফঃ আমি রাসেল ভাইয়ের সাথে একমত। প্রোগ্রামিং এর পরীক্ষাগুলোর প্রশ্ন সাধারণত ট্রিকি হয়। অনেক সময় এরকমও হয় যে কিছু প্রব্লেম এর উত্তর থাকেনা। সেগুলো নিয়ে যারা চেষ্টা করে তাদেরকে আমরা ধরে নেই যে কিছু একটা বিষয় নিয়ে চিন্তা করতে আগ্রহী সে। এরকমও অনেক সময় হয় যে আমরা হয়তো একটা নির্দিষ্ট প্রশ্ন ঠিক করে রাখি এবং সেটা যারা যারা উত্তর করার চেষ্টা করেছে শুধুমাত্র তাদেরকেই পরবর্তী ধাপে ডাকি।

প্রশ্ন-উত্তর পর্ব:

(প্রশ্ন-১) সুমাইয়া আফরোজ: আমার দুইটা প্রশ্ন আছে। নন-আইটি বিভাগ থেকে যদি কেউ আগ্রহী হয় সফটওয়্যার ডিপার্টমেন্টে কাজ করতে, সেক্ষেত্রে কি করনীয়? এবং চাকরির ক্ষেত্রে আসলে ডিগ্রির গুরুত্ব ঠিক কতটা? যেমন- শুধু স্নাতক করলে তার প্রভাব কেমন হবে এবং স্নাতকোত্তর করলে তার প্রভাব কেমন হবে?

মুনির হাসান: এখানে প্রথম প্রশ্নের উত্তরটা হচ্ছে আমাদের আজকের অতিথিদের একজন, নুসরাত। কেননা ও স্নাতক পাশ করেছে বিবিএ থেকে। এরপরেও সে একটা আইটি ফার্ম চালায়। 

বি এম শরীফ: কোন বিভাগ থেকে স্নাতক পাশ করেছে কিংবা আদৌ কোন প্রতিষ্ঠানে গিয়েছে কিনা এটা আসলে অতোটা গুরুত্ব দেওয়ার মতো বিষয় না। বিষয় হচ্ছে, যে পদের জন্য আপনি আবেদন করছেন সেই কাজগুলো আপনি কতটা জানেন। এটা অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় একজন নন-আইটি বিভাগের হয়েও সে আইটি বিভাগের কারোর থেকে অনেক বেশি যোগ্য এবং অনেক ভালো কাজ করে। তাই এই চিন্তাটা মাথায় একদমই রাখা উচিত না যে- আমি সিএসই বিভাগের না তাই এই জব আমার জন্য না।

ইকবাল আহমেদ এফ. হাসান (রাসেল): আমি আমার একটা কেস স্ট্যাডির গল্প শেয়ার করি। আমরা একটা কেমিক্যাল কোম্পানি থেকে ইআরপি এর অর্ডার নিয়েছিলাম। এই অর্ডার সাইন করার পড়ে সেখানকার ম্যানেজিং ডিরেক্টর আমাকে ডেকে নিয়ে গেলেন এবং বললেন যে আমি তাকে একটু সাহায্য করতে পারি কিনা। তার কারখানায় অনেক ধরণের মেশিন রয়েছে এবং তার জন্য একটা সফটওয়্যার বানিয়ে দিতে হবে। তো সেক্ষেত্রে ওই কারখানার মেশিনগুলোর বিস্তারিত বর্ণনা আমার প্রয়োজন। আমাদের এই সফটওয়্যারগুলো বানাতে গিয়ে যে শুধু কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারই লাগবে এমন নয়। অন্যান্য আরো ডিপার্টমেন্ট যেমন- কেমিস্ট্রি, হিউম্যান রিসোর্স (এইচ আর), বিবিএ ইত্যাদি থেকেও আমাদের লোকের প্রয়োজন হয়। একজন প্রার্থীকে আসলে বুঝতে হবে সে কোন কোম্পানির জন্য যোগ্য। 

আরেকটা বিষয় হচ্ছে, স্নাতক কিংবা স্নাতকোত্তর চাকরি শুরুর ক্ষেত্রে এর তেমন কোনো প্রভাব নেই। স্নাতকোত্তর সাধারণত চাকরির প্রথমেই কারো প্রয়োজন নেই, তবে কেউ যদি মনে করে যে সে একেবারে তার স্নাতকোত্তর শেষ করে চাকরি জীবন শুরু করবে, সে ক্ষেত্রে বিষয়টা সম্পূর্ন ভিন্ন।

মুনির হাসান: বিষয় গুলো এখানে একেবারেই পরিষ্কার যে, চাকরি দেয়ার ক্ষেত্রে দেশে বা বিদেশে এখন আর কেউ ডিপার্টমেন্ট খোঁজেনা। নিজের চেষ্টায় যেকোনো ডিপার্টমেন্ট থেকে পড়াশুনা করে অনায়াসে অন্য যোগ্যতার কাজ করা সম্ভব। ২০১৯ সালের অ্যাপল কোম্পানির নিয়োগ পরিসংখ্যানে বলা আছে যে, তারা ৪০% নতুন নিয়োগ দিয়েছে যেখানে এটা যাচাই করা হয়নি যে- কার প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রী কোন পর্যন্ত। 

এখানে একটা প্রশ্ন থেকে যায় যে, যদি প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রী প্রার্থী নির্বাচিনের মাপকাঠি না হয় তাহলে তারা কিভাবে কাউকে যাচাই করছে! এর উত্তর আগেই আজকের অতিথিরা দিয়েছে যে, একজন প্রার্থীর সাহস আছে কিনা, সে কতটুকু চিন্তা শক্তি ব্যবহার করতে পারে কিংবা আদৌ সে একটা প্রব্লেম নিয়ে চিন্তা করতে আগ্রহী কিনা এসকল জিনিস হচ্ছে প্রার্থী নির্বাচনের মাপকাঠি। 

আরেকটা বিষয় হচ্ছে, আমাদের ছাত্ররা যেকোনো বিষয়ে যথেষ্ট মনোযোগী না। এই কথা বলার কারণ হচ্ছে, এদেরকে কোথাও রেফার করতে গেলেও একজনকে অনেকবার ভাবতে হয় যে সে আদৌ অফিসে গেল কিনা। এটা আমি নিজস্ব অভিজ্ঞতা থেকে বলছি। অফিসে যাওয়া দূর, ঐ প্রার্থীকে টেলিফোন করা হলে সেটারও কোনো সাড়া পাওয়া যায়না। এরকম হবার কারণে একজন রেফারকারিকে সেই অফিসের পরিচিতদের কাছে ছোট হতে হয়। ফলে পরবর্তীতে আর কাউকে রেফার করার ক্ষেত্রে একজনকে অনেকবার ভাবতে হয়। 

(প্রশ্ন-২) মো. কামরুজ্জামান: বর্তমানে আইটি সেক্টরে চাকরির ক্ষেত্রে কেউ যদি সরাসরি কোনো প্রতিষ্ঠানে গিয়ে কাজ না করে বাইরে থেকে কাজ করতে চায়, তাহলে সেটা কি সম্ভব? এটা আমি জানতে চাচ্ছি কারণ হচ্ছে আমি একটি বিভাগীয় শহরে থাকি এবং আমার উপার্জন প্রক্রিয়া সম্পূর্ন আমার বিভাগ কেন্দ্রিক। তবে আমি চাচ্ছি এখন সফটওয়্যার এর দিকে মনোনিবেশ করতে। 

মুনির হাসান: তুমি যদি তোমার স্কিলসেট বুস্ট করতে পারো, তাহলে তুমি পৃথিবীর যেকোনো জায়গা থেকে চাকরি করতে পারবা। এটাই আমার উত্তর

 

ইকবাল আহমেদ এফ হাসান: শুরু থেকে একটু কঠিন রিমোট অবস্থা থেকে চাকরি করা। একটা সার্টেইন পিরিউড পরে তুমি যেকোন জায়গা থেকে রিমোটলি চাকরি করতে পারবা। আমার ধারণা ৫ বছর একটা ব্যাকোওয়ার্ড ধারণা লাগে। যেটা একদম শুরু থেকে ফ্রেসারকে বা ১ বছরের এক্সপেরিয়েন্সড কাউকে রিক্রুট করবে না রিমোট থেকে। কারণ কোম্পানিতে একটা কালচার আছে যা রিমোট থেকে করা খুবই টাফ। আমার সিটিও আজকে রাতে আমেরিকা যাচ্ছে। আমি যাওয়ার আগে আমার সাথে কোনো মিটিং হয়নি কারণ ওর জন্য আমার এখন লোকেশন চিন্তা করতে হয় না। ও যেকোনো সময় মেইল রিপ্লাই দেবে, যেকোনো সময় সে কাজের আউটপুট দিতেই থাকবে, সে তার টিম সুপারভিশন সব কিছুই সে করতে পারবে কিন্তু প্রথম দিকে এটলিস্ট এক দুই বছর তাকে ঐ স্টেটে তৈরি হতে হবে যেখানে তার কোয়ালিটি বেঞ্চমার্ক বুঝতে পারবে এবং রিমোটে রেখে কোম্পানির ডিমান্ড ফুলফিল করতে পারবে কিনা, সেটা অফকোর্স করতে পারবে। জবগুলো কিন্তু আল্টিমেটলি রিমোট। আমার ডাটা সেন্টারে যারা সিস্টেম এডমিনিস্ট্রেটর তারা অফিসে বসে কাজ করতেছে ইউএসএ বা কানাডাতে। আমি শুধু কালচারটা অফিসে ধরে রাখছি। আল্টিমেটলি কাজ কিন্তু রিমোটেই হচ্ছে। রিমোটে কাজ করা যাবে কিন্তু অফিসে একটা সারটেইন পিরিওড কাটাতে হবে সেটা আমার বিলিফ। 

 

নুসরাত জাহান: আমি একটু অ্যাড করি আর আমি দুইজনের সাথেই এগ্রি করি। কাম্রুজ্জামান ভাই, ইট টোটালি ডিপেন্ডস অন দেয়ার কোম্পানি। এটা আপনি কোথায় অ্যাড করছেন, এটা আসলে পসিবল কিনা এটা ফুললি ডিপেন্ড করছে ঐ কোম্পানির উপর। যেমন আমি একটা ভিআর ডেভেলপ করছি। কিন্তু এখন কেউকে পাচ্ছি না আর। যদি একটা পায় যে সিলেট থেকে আমার নিডটা ফুলফিল করতে পারবে তাহলে আমি তাকে রিক্রুট করবো। হোক সে ফ্রেসার হোক সে এক্সপেরিয়েন্সড। 

 

মুনির হাসান: যদি কারো ভেরি স্পেশালাইজড কাজের স্কিল থাকে তাহলে সেটা বাসায় বসে করা সম্ভব। তবে ইন জেনারেল আমি রাসেলের সাথে একমত যে শুরুর দিকে অফিসে আসতে হবে। সে যদি শুরু থেকেই রিমোটলি কাজ করে তাহলে সে অফিসের কালচার বুঝবে না। 

 

(প্রশ্ন-৩) মনিরা এনাম হেয়া:  আমি এক বছর ধরে একটা সফটওয়্যার কোম্পানিতে চাকরি করছি। আমি যদি অন্য জায়গায় সুইচ করতে চাই, তাহলে আমার মতো কম এক্সপেরিয়েন্সড মানুষের কাছে রিক্রুটিং কোম্পানি কি আশা রাখে, আমি রিসেন্টলি একটা প্রজেক্টে কাজ করেছি যেখানে টিম নিয়ে একটা ছোট পার্টে কাজ করেছি এক্ষেত্রে জাজমেন্ট ক্রাইটেরিয়াটা কি হবে এবং আরেকটা প্রশ্ন নুসরাত ম্যামের কাছে, ইউনিভারসিটি লেভেলে বা ফ্রেশার লেভেলে দেখা যায় ভি আর নিয়ে তেমন একটা কাজ করা হয় না, এক্ষেত্রে আপনাদের এক্সপেকটেশনটা কি থাকে? আর কেউ যদি আসতে চাই, তাহলে সে ক্ষেত্রে প্রিপারেশনটা কেমন হওয়া উচিত?

 

ইকবাল আহমেদ এফ হাসান:  সিম্পল অ্যান্সার, এক বছরের স্কিল।

 

বি এম শরিফঃ আমরা যখন সিভি শর্ট লিস্ট করি তখন এক্সপেরিয়েন্স দেখি এবং সে লাস্ট অরগানাইজেশনে কত দিন ধরে ছিলো। সুইচিং ক্যাপাবিলিটি যদি বেশি থাকে বা এক বছরের কম সময় থেকে থাকে (এক বছর কিন্তু খুব বেশি সময় না), ওই ধরনের সিভি আমরা সহজে কাউন্ট করি না। আর আরেকটা ব্যাপার দেখি সেটা হলো, অ্যাপ্লিক্যান্ট এর বাসা আমাদের অফিসের আশেপাশে কিনা না হলে পরে চাকরি পরিবর্তনের একটা মনমানসিকতা কাজ করে। এক্সপেরিয়েন্স কিন্তু অনেক রকমের ক্যাটাগরি হতে পারে। যেমন, যে একদিনও অফিসে জব করেনি তারও ৫ বছরের এক্সপেরিয়েন্স থাকতে পারে আবার যে ৫ বছর অফিসে জব করেছে, তার ১দিনেরও এক্সপেরিয়েন্স না থাকতে পারে। দেখা যায় একটা স্টুডেন্ট গ্রাজুয়েশন টাইমে এমনভাবে নিজেকে প্রস্তুত করলো যে সে ৫ বছর এক্সপেরিয়েন্সে যা শেখার কথা তা শিখে ফেললো। আবার ৫ বছর ধরে চাকরি করা মানুষটা কিছুই শিখতে পারলো না। এক বছরের অভিজ্ঞতার ব্যাপারটা নির্ভর করে কর্ম ক্ষেত্রের ওপর। আপনি যে ক্ষেত্রে অবেদন করেছেন তার সাথে আপনার এক বছরের অভিজ্ঞতা মিলছে কি মিলছে না তাও দেখতে হবে। যদি না মেলে তাহলে তাকে আবার নতুন করে শুরু করতে হবে। যদি মিলে যায়, তাহলে আমরা তা বিবেচনা করি। আর একটা ব্যাপার ভালোভাবে দেখি যে আবেদনকারি গত তিন বছরে কয়টি চাকরি-বদল করেছে এবং কেন করেছে। 

 

ইকবাল আহমেদ এফ হাসানঃ  যদি কারো রিলেভেন্ট স্কিল থাকে তাহলে সেটা গ্রহণযোগ্য। কেউ যদি পিএইচপি তে ১ বছরের অভিজ্ঞতা নিয়ে অন্য কোন বিভাগ যেমন পাইথনে এপ্লাই করে তাহলে সেটা কাউন্টেবল না। 

 

নুসরাত জাহান: মনিরা আপুর প্রশ্নটি ছিল তিনি গ্রুপে কাজ করেছেন এবং চাকরি পরিবর্তনের ক্ষেত্রে এটি কিভাবে গণ্য হবে। টিমে কাজ করলেও তিনি কোনো একটি নির্দিষ্ট কাজে ১ বছরের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। যদি তিনি নতুন কোথাও চাকরির আবেদন করতে যান, তাহলে তার উচিত ঠিক ঐ নির্দিষ্ট কাজের ক্ষেত্রেই আবেদন করা, এটাই সবচেয়ে বেশি গণ্য হবে। তিনি এক বছরে কি কি দক্ষতা অর্জন করেছেন সেটাই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ যাচাইয়ের ক্ষেত্রে। 

 

আপনার দ্বিতীয় প্রশ্ন ছিল, এ আর এবং ভি আর এর ক্ষেত্রটি কিভাবে শিখতে পারেন। এখানে আমার পরামর্শ হবে অনলাইনে প্রচুর ওপেন সোর্স তথ্য রয়েছে যেখান থেকে অনেক কিছু শেখা যায়। আমরা ইউনিটি গেম ইঞ্জিন ব্যবহার করি। এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ইউনিটি আর সি- শার্প জানা। আমরা আমাদের ইন্টার্নদের ট্রেইনিং প্রভাইড করি। আমরা এটাকে ট্রেইনিং হিসেবে বিবেচনা না করে ইন্টার্ন এর একটা অংশ হিসেবে বিবেচনা করি। আমরা ৩ মাসের ইন্টার্নশিপ করাই এবং যদি দেখি ইন্টার্ন এর কর্মদক্ষতা ভালো, তাহলে আমরা তাকে পার্মানেন্ট হিসেবে নিয়ে নেই। অনেক সময় দেখা যায় একজন ভি আর ডেভেলপার কিন্তু সে থ্রিডি ডেভেলপার না। ইন্টারনেটে অনেক ফ্রি থ্রিডি মডেল আছে, যেগুলো নিয়ে কাজ করতে করতে সে অনেক কিছু নিজে নিজে শিখে নিতে পারবে। যদি সে প্রোটোটাইপ বা একটি ডেমো উপস্থাপন করতে পারে তাহলে আমরা তাকে এগিয়ে যেতে উৎসাহ দেই। 

 

মুনির হাসান: ইন্টারনেটে ফ্রি কনটেন্ট ছাড়াও কিছু পেইড কোর্স আছে যার মাসিক সাবক্রিপশন ফি ৫ ডলার যা টাকায় হবে ৪০০ টাকার কিছু বেশি। যেমন, কেউ যদি কনটেন্ট রাইটিং শিখতে চায়, তাহলে ৫ ডলারের একটা কোর্সই করতে পারে না হলে এটা বোঝা যাবে না যে সে এই বিষয়ে সিরিয়াস এবং তার কোনো ডেভেলপমেন্ট হলো না। আর আজকাল তো ৪০০ টাকা দিয়ে একটা পিৎজাও পাওয়া যায় না। 

পরের জনের কাছে যাওয়ার আগে একটা প্রশ্ন নিয়ে নেই, বাংলাদেশে আন্ডারগ্রেজুয়েটদের ইন্টার্নশিপ এর সুযোগ কম কেন? 

 

ইকবাল আহমেদ এফ হাসান:  ইন্টার্নশিপ দেওয়ার একটা জটিলতা হলো, ইন্টার্নরা এটাকে তেমন একটা গুরুত্ব দেয় না। তার ঠিক মত টাইম মেইন্টেইন করে না। কিন্তু কোম্পানিত তাদের কাজের উপর প্রতিনিয়ত নজর রাখছে। 

 

নুসরাত জাহান:  মিঃ রাসেলের সাথে আমিও সহমত। যেমন, বিবিএ শেষ করার পর আমরা মোট তিন জনের একটা গ্রুপ ইন্টার্ন করেছিলাম। দেখা গেলো আমি ছাড়া বাকি দুজন একেবারেই সিরিয়াস ছিল না এবং পরে ইন্টার্ন ছেড়ে দিয়েছে। এটা নন-পেইড ইন্টার্ন হলেও আমি পুরো তিন মাস করেছি এবং অনেক কিছুই শিখেছি। আমি এখানে একটা কথাই বলতে চাই, যে আসলেই চাকরি খোঁজে, তার জন্য কখনো চাকরির অভাব হয় না।

 

মুনির হাসান: আমি আমার ইন্টার্নশিপ এর কথাটা বলি। আমাদের সময় ইন্টার্নশিপকে বলা হতো ইন্ডাস্ট্রিয়াল এটাচমেন্ট। আমার ইন্টার্নশিপ ছিলো মেহের ইন্ডাস্ট্রিসে। আমরা মোট ৪০ জনের একটা গ্রুপ ছিলাম। ওখানে পরিচিতি পর্ব শেষে তারা আমাদের জিজ্ঞেস করলো ‘আপনারা কি আপনাদের সিনিয়রদের মতো অ্যাটাচমেন্ট করবেন নাকি নতুন করে করবেন?’ আমরা জিজ্ঞেস করলাম আমাদের সিনিয়ররা কিভাবে অ্যাটাচমেন্টে ছিলেন। তারা বললেন যে, আপনাদের সিনিয়ররা শুধুমাত্র প্রথমদিন এসেছিলেন এবং শেষেরদিন এসে সার্টিফিকেটটা নিয়ে গিয়েছিলেন। আমরা সবাইকে সার্টিফিকেট দিয়ে দেই। আমরা বললাম আমাদের আর দ্বিতীয় পদ্ধতি শোনার দরকার নেই আমরা এ পদ্ধতিই নেব এবং শেষের দিন এসে সার্টিফিকেটটি নিয়ে যাবো। কিন্তু আমার একটা বন্ধু প্রতিদিনই ইন্টার্নশিপে যেত এবং আমরা তার সাথে হাসি-ঠাট্টা করে বলতাম সার্টিফিকেট তুইও পাবি আমরাও পাবো। সে একমাস ট্রেইনিং করলো এবং সে সবগুলো ডিপার্টমেন্টে কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলো। আমাদের পাশ করার পর আমরা প্রথম ইন্টারভিউর ডাক পেয়েছিলাম সিমেন্স থেকে এবং আমরা চিঠি খুলে দেখলাম লেখা আছে, ‘আপনাদের একটা প্র্যাক্টিক্যাল পরীক্ষার জন্য আমন্ত্রন জানানো হচ্ছে’। আমরা কেউই পরীক্ষা দিতে যাইনি শুধু যে ছেলেটা একমাস ধরে ইন্টার্নশিপ করেছিলো সে গিয়েছিলো এবং সে’ই আমাদের মাঝে সবার আগে চাকরি পেয়েছিলো। সে এখন সিমেন্স এর অস্ট্রেলিয়া শাখার ইলেক্ট্রনিকস ডিপার্টমেন্ট এর হেড, শুধু সেই একমাসের ব্যবধানের জন্য। 

 

(প্রশ্ন-৪) দুতি ইসলাম: আমার একটা ১ বছরের ইন্টার্ন এক্সপেরিয়েন্স আছে আর আমি পার্ট-টাইম করতাম যখন আমি বি এস সি লেভেলে ছিলাম। কোম্পানিটা খুব রিসেন্টলি আইটি নিয়ে কাজ শুরু করেছে অনেকটা স্টার্ট আপও বলা যায়। কিন্তু যখন আমি কোথাও জবের জন্য সিভি ড্রপ করি এবং আমার এক্সপেরিয়েন্স যাচাই বাছাই করি তখন দেখা যায় কোম্পানিটার কোনো অস্তিত্ব ডকুমেন্টেড নেই। আমার রিসেন্ট একটা ইন্টারভিউতে রিক্রুটাররা আমাকে বলেছে যে, এ ধরনের এক্সপেরিয়েন্সগুলো শেয়ার না করতে। আমার প্রথম প্রশ্ন হলো কোম্পানিটার কোনো অস্তিত্ব নেই কিন্তু আমারতো ওখানে ১ বছরের এক্সপেরিয়েন্স আছে, এটা কি শেয়ার করা আমার জন্য ভুল হবে?

 

আমি সিএসই ব্যাকগ্রাউন্ড এর এবং বর্তমানে এম বি এ করছি। আমার পরিকল্পনা হচ্ছে সি এস ই ব্যাকগ্রাউন্ডে থেকে বিজনেস অ্যানালিস্ট বা ডেভেলপমেন্ট এক্সিকিউটিভ হিসেবে কাজ করা। আমার দ্বিতীয় প্রশ্নটা হলো বিজনেস এক্সিকিউটিভদের মুল কাজটা কি এবং সি এস এবং বিজনেস এর মাঝের এই ব্রিজটা কতোটুকু সাস্টেইনেবল নতুন যারা চাকরি খুঁজছে তাদের জন্য? আর আমরা যখন কোথাও সিভি ড্রপ করি এবং যদি সিলেক্টেড হই তাহলে আমাদের একটা মেইলের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হয় আর যদি সিলেক্ট না হই তাহলে কোন মেইলই দেওয়া হয় না। এটা কেন?

 

ইকবাল আহমেদ এফ হাসান: ৩য় প্রশ্ন হলো কেন রিজেক্টেড অ্যাপ্লিকেন্টদের মেইল পাঠানো হয় না। দেখা যায় আমরা ১০০০ জনের মধ্যে ১ জন সিলেক্ট করি। মেইল দিয়ে ঐ সিলেক্টেড অ্রাপ্লিকেন্টকে জানানোর চাইতে রিজেক্টেড ৯৯৯ জনকে জানাতে অনেক পরিশ্রম করতে হয়। সত্যি বলে কোনো প্রতিষ্ঠান এতো পরিশ্রম দিতে চায় না। 

 

মুনির হাসান: আমি একটু যোগ করি এই প্রশ্ন যেহেতু আলোচনা করছি। কস্ট অফ রিক্রুট্মেন্ট কিন্তু অনেক। এজন্য অনেক কোম্পানি এখন আর বিজ্ঞপ্তি দেয় না। আমার মনে আছে একবার আমি ভাইভা বোর্ডে বসে ছিলাম কিন্তু যে তিনজন ইন্টারভিউ দিতে আসার কথা তারা কেউই আসে নি। একজন বললো সে বের হয়েছে কিন্তু ১.৫ ঘন্টায়ও সে আসেনি এবং পরে আর তার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে পাওয়া যায়নি। তোমরা যদি ইন্টারভিউয়ের ক্ষেত্রে আর একটু প্রফেশনাল হও তাহলে এই পরিস্থিতি উন্নতি সম্ভব। 

 

ইকবাল আহমেদ এফ হাসান:  সত্যিকার অর্থে এই ধরনের অভিযোগ আমাদের কাছে অনেক আছে। রিক্রুট্মেন্ট এর জন্য আগে আমরা কোন সিস্টেম ব্যবহার করতাম না। এইভাবে রিপ্লাই দেওয়ার সিস্টেমটা ছিলো না। সম্প্রতি সফটওয়্যার এর মাধ্যমে আটো-রিপ্লাই দেওয়া হয়। আশা করি এ ধরনের সিস্টেম বাংলাদেশে আরো প্রসারিত হবে। সত্যি বলতে আমরা এখনো অনেকখানি পিছিয়ে।   

 

নুসরাত জাহান: ইন্টারন্যাশনাল অনেক প্রতিষ্ঠান এটি অনুসরণ করে। ইমেইলে তাদেরকে শান্তনা দেওয়া হয় এবং পরবর্তীতে কোন ভ্যাকেন্সি হলে সেই পদে আবেদন করতে উৎসাহিত করে। বাংলাদেশে এটা এখনো হচ্ছে না কারণ আমরা এখনো মানুয়্যাল সিস্টেমে আছি যখন স্বয়ংক্রিয় সিস্টেমে চলে যাবো তখন এ পরিস্থিতি মোকাবেলা করা সম্ভব। 

 

২য় প্রশ্নটি ছিল যে কোম্পানি নেই সেই কোম্পানির নাম কি সিভিতে লেখা উচিত কিনা? আমার মনে হয় এটা অবশ্যই লেখা উচিত কারণ এক বছরে ও কিছুতো শিখেছে।

 

ইকবাল আহমেদ এফ হাসান:  বোর্ডে ইন্টারভিউয়ার কিন্তু অনেকেই থাকে। এক এক জনের দৃষ্টিভঙ্গি এক এক রকম। আমি পরামর্শ দেব সিভিতে সত্যনিষ্ঠ থাকতে। ফেক স্টেটমেন্ট দেওয়া উচিত না।

ওনার আরেকটা প্রশ্ন ছিলো সি এস এবং বিজনেস এর মাঝের এই ব্রিজটা কতোটুকু সাস্টেইনেবল নতুন যারা চাকরি খুঁজছে তাদের জন্য?  

এক্ষেত্রে আমি বলবো আমরা গত ১৫ বছর ধরে এটাই খুঁজছি! আমরা চাই একটা মেয়ে শুধু সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার না সে বিজনেস উইংও হবে। দুবাইয়ের একটি সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানের বিজনেস ডেভেলপমেন্টের হেড রিজিওনাল হেড নিজেই সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। যারা ইঞ্জিনিয়ার তারা একই সাথে অ্যানালাইসিস, সাপোর্ট, কাস্টমার সার্ভিস ক্রস ডিপার্টমেন্টে চলে যাবে। না হলে একটা গুরুতর অসামঞ্জস্যতা।

 

মুনির হাসান: গতকাল আমরা একই রকম একটা কথা বলেছি যে আমাদের সব ডাক্তারদের কেন একই পদে অ্যাপ্লাই করতে হবে? আর সিএসএ দেখি সবাই প্রোগ্রামিং করতে চায় আর যারা কোডিং করতে চায় না তারা কোডিং এর ধারে কাছেই যায় না।

 

(প্রশ্ন-৪) হাফসা সুলতানা: আমরা পড়াশুনা চলাকালিন অবস্থায় কিভাবে লক্ষ্য নির্ধারণ করতে পারি? দেখা যায় অনেকগুলো সুযোগ বিভিন্ন দিক থেকে আসে কিন্তু কোন লক্ষ্য বেঁছে নেওয়া উচিত। 

 

মুনির হাসান: লিসেন টু ইউর হার্ট। তুমি নিজে কি করতে চাও। তুমি যেটাতে বেশি আকর্ষিত সেটাতেই মনোযোগ দাও। বাইরে কি হচ্ছে সে দিকে দেখার দরকার নেই। পুরো বিশ্বে এখন সিএস এর জয় জয়কার। তুমি যদি এখন জিনিসটা ভালো মতো শেখো তাহলে তোমাকে কেউ আটকিয়ে রাখতে পারবে না। তুমি যদি বিভিন্ন জনের কথা শোনো তাহলে তোমার সব ভালো লাগবে।

 

ইকবাল আহমেদ এফ হাসান: আমি যখন ৯৭ এর দিকে সিএস এ ভর্তি হই তখন আমার কোনো পথপ্রদর্শক ছিলো না। আপনারা কমপক্ষে একজন পথপ্রদর্শক পাচ্ছেন। আমার ইচ্ছা ছিলো আমি একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হবো। আমি দেখলাম ২৩টা প্যাসকেলের সমস্যা ছিলো আমার ১ম বছরেই। আমি বুঝলাম আমি একজন ভালো সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার মত ধৈর্য্য আমার নেই। ২য় বছরের ডিজিটাল সিস্টেমের বই পড়ে আমার মনে হলো আমার একজন মাইক্রো প্রসেসর ইঞ্জিনিয়ার হওয়া উচিত। এক বছরেই বুঝতে পারলাম যে বাংলাদেশে হার্ডওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হওয়া মানেই আমাকে যন্ত্রপাতি নিয়ে কাজ করতে হবে। ৩য় বছরে আমি নেটওয়ার্কিং সিস্টেম অ্যাডমিনিস্ট্রেশন এ চলে যায়। যখন আপনি কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে পড়বেন, আপনি সাবজেক্টগুলো নিয়ে দৌড়াবেন। আমার মতে এটার সবচেয়ে ভালো উত্তর দিতে পারবে একজন ডাক্তার। ডাক্তারদের একটা জেনারেল এমবিবিএস করানো হয়। সেখানে থেকে সে ডিসাইড করে সে কোন দিকে যাবে। আপনারই সিদ্ধান্ত নিতে হবে আপনি কি করবেন এবং সাথে ক্রস ম্যাচ করাতে হবে বৈশ্বিক পরিবর্তনটা কোন দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

 

বি এম শরিফ: প্রোগ্রামিং এর ক্ষেত্রে অনেকেই ইন্টেরেস্টেড হয় না। অনেকটা ভীতি কাজ করে। সে ক্ষেত্রে মেয়েরা একটু বেশি বিচক্ষণ হয় এবং তাদের জন্য আমার মতে কিউ এ ইঞ্জিনিয়ারিংটাও একটা ভালো পথ। একটু মনোযোগী হলেই কিন্তু যেকোনো সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানে কিউ এ ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে যোগ দেওয়া যায়। 

 

মুনির হাসান: মেয়েরা ম্যানেজার পদে ভালো দক্ষতা দেখায়, কিন্তু তারা ম্যানেজার পদে যেতে চায় না। একটা প্রশ্ন এসেছে, ‘আমার কোম্পানিতে তুমি কি ভ্যালু অ্যাড করতে পারবে? এক্ষেত্রে কি আশা করা যায়।

 

ইকবাল আহমেদ এফ হাসান: আমি এই ধরনের প্রশ্ন করি না। আমি জিজ্ঞেস করি তুমি যে ৪ বছর সিএস পড়েছো, তুমি কি কোনো ভাবে সরাসরি অথবা পরোক্ষভাবে বাংলাদেশ সরকারের ডিজিটাল উন্নয়নে তোমার ইনপুট আছে কিনা?

 

নুসরাত জাহান: যে পদের জন্য সে অ্যাপ্লাই করেছে, সে ওই পদে আসলে কতটুকু ভ্যালু যোগ করতে পারবে। এটা যদি সে ভালো ভাবে বুঝাতে পারে তাহলে ঠিক আছে। 

 

মুনির হাসান: একটা প্রশ্ন এসেছে ‘যারা এথিকাল হ্যাকিং শেখে তাদের বাজার কেমন?

এখন আমার মুল বক্তব্যটা হলো তোমাকে সাহসী হতে হবে এবং একটা কিছু শিখতে হবে। ৯৮ এর দিখে যখন আমরা রিক্রুট করতাম তখন বন্যা হয়েছিলো এবং আমরা টিএসসিতে বন্যা দুর্গতদের জন্য হাতে রুটি বানাতাম। ইন্টারভিউ বোর্ডে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলে হলেই আমি জিজ্ঞেস করতাম তুমি কি রুটি বানিয়েছিলে। যদি সে হ্যাঁ বলতো তাহলে তার সাথে কথা বলে একটা আনন্দ পেতাম। একজন জয়েন্ট সেক্রেটারি আমাকে জিজ্ঞেস করল আমি কেন এই প্রশ্ন সবাইকে করছি। আমি বললাম আমি দেখতে চাই তারা কি সহজে বিচলিত হয়ে যাচ্ছে কিনা। তুমি যে চার বছরে শুধু প্রোগ্রামিং শিখেছো তা না। তুমি চার বছরে স্মার্ট থেকে স্মার্টার হয়েছো। আরেকবার জিজ্ঞেস করেছিলাম যশোর থেকে খুলনা যেতে কতগুলো স্পিড ব্রেকার পরে। আমি গুনেছিলাম তাই আমি জানি ৫৬টা আছে। কিন্তু ও তো গোনেনি। আমি তার কাছে আশা করি সে কনফিডেন্টলি বলবে সে জানে না। আমি তার কনফিডেন্স লেভেলটা যাচাই করি। সে যদি কনফিডন্টলি উত্তর না’ই দিতে পারে, হুম-হাম করে তাহলে আমি তো তাকে নিয়ে পরে বিপদে পড়ে যাবো। তাকে আমি একটা কাজ দিব, সে পারবে না এবং আমাকে বলবেও না যে সে এটা পারছে না। ইন্টারভিউ বোর্ডে সব কিছু পারবে এটা কেউ আশা করে না। তোমার উচিত তুমি নিজেকে তৈরি করো। সিদ্ধান্ত নাও কোন দিকে যেতে হবে। আর এসব নিয়ে বিডিওএসএন থেকে আমরা প্রতিনিয়ত তোমাদের নিয়ে কাজ করছি এবং তোমাদের সাথে যোগাযোগ থাকবে। 

 

বি এম শরিফ: শেষ মন্তব্য হচ্ছে, আগে একটা লক্ষ্য নির্ধারণ করেন, আপনি কোন দিকে আগাতে চান সেটার জন্য প্রস্তুত করুন নিজেকে এবং নিজেকে নিজে বিচার করুন আপনি কতটুকু প্রস্তুত।  যদি লক্ষ্যটাতে যাওয়ার কনফিডেন্স থাকে, তাহলে লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যান। যদি না থাকে তাহলে লক্ষ্য বদলান। নিজেকে জিজ্ঞেস করেন।

 

নুসরাত জাহান: প্রথম পয়েন্ট হচ্ছে শেষ বর্ষের শিক্ষার্থীরা এখন থেকেই নিজেকে তৈরি করা শুরু করে দিন। আমার মতে কমপক্ষে ৬ মাস আগে থেকে চাকরির আবেদন শুরু করা উচিত। যাতে পড়াশুনা শেষে তাদের ১ দিনও বাসায় বসে থাকতে না হয়।

দ্বিতীয় পয়েন্ট হলো, এখন কিন্তু নেটওয়ার্কিং এর যুগ। সবাই কিন্তু ফেসবুকে আছেন এবং তাদের সাথে যোগাযোগ করা তেমন একটা কঠিন না। যদি আপনার যদি কোন পছন্দের কোম্পানি বা ব্যক্তিত্ব থাকে, তাদের তাদের সাথে সঠিকভাবে এবং সঠিক পদ্ধতিতে যোগাযোগ করা। বার্তাটি যেন পরিষ্কার থাকে কারণ শীর্ষ ব্যক্তির কাছে এসব মাথায় রাখতে হবে না হয় সে আপনার প্রশ্নের উত্তর দেবে না। 

 

মুনির হাসান: নুসরাত একটি নতুন পয়েন্ট যোগ করলো তা হলো ‘যোগাযোগ’। এই করোনাকালে আমার অনেক শীর্ষ মানুষকে ইমেইল পাঠাতে হয়েছে যেমন, ইন্টেলের চেয়ারম্যান। এবং এক একটা মেইল লিখতে আমার ২ দিন করে সময় লেগেছে। কারণ আমি জানি আমার কাছে একবারই মেইল পাঠানোর সুযোগ আছে। যদি প্রপার মেইল না হয়, তিনি মেইলটা ফেলে দেবেন। তোমাদের মেইল দিতে হবে শরীফ, নুসরাত এবং রাসেলের মতো ব্যক্তিদের। মেইল এমনভাবে লিখতে হবে যাতে তাদের কাছে তোমার মেইল পড়াটা টাইম নষ্ট হওয়া মনে না হয়।


ইকবাল আহমেদ এফ হাসান: আমার কাছে বর্তমানে ১৪৯৫১টা মেইল না পড়া অবস্থায় আছে। আমি আগে সাবজেক্ট লাইন দেখি যদি সাবজেক্ট লাইনে আকর্ষণীয় কিছু থাকে তাহলে আমি মেইলটা পড়ি। আমি চাই আপনারা সবাই কোন একটা প্রতিষ্ঠানে একটা পদে যোগদান করুন। কিছুক্ষণের জন্য ছোট বাচ্চা হয়ে যান এবং প্রতিষ্ঠানের সকলকে প্রশ্ন করতে থাকেন, তারা কি করেন এবং তাদের স্কিলগুলো সম্পর্কে জানুন। সব কিছু ছেড়ে ৩টা বছর একটু অনুগত থাকেন। তারপর আপনারা ক্যারিয়ার গড়তে পারবেন, হাসতে পারবেন এবং নিজেদের প্রভাব তৈরি করতে পারবেন।