চারপাশের ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা নানা ধরণের উৎসকে কাজে লাগিয়েই যে একটা প্রতিষ্ঠান দাঁড় করানো যায় সে উদাহরণ তৈরি হয়ে গেছে। বিভিন্ন জনের ভাবনা, চিন্তা, পরামর্শগুলো সমন্বয় করে একেকটি কাজের শুরু, আছে তাতে সফলতাও। আর এভাবেই ২০০৫ সাল থেকে একটু একটু করে এগিয়ে বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্ক-বিডিওএসএন এখন ১৫ বছরের কিশোর।
দেশের আইটি সেক্টরে বিডিওএসএনকে চেনে না এমন মানুষ কমই আছে। সারাদেশের কম্পিউটার সায়েন্স, কারিগরি, ভোকেশনাল শিক্ষার্থীদের অনেকেই এখন বিডিওএসএনকে চেনে। সারাদেশে হাজার হাজার ভলান্টিয়ার। যেকোনো নির্দেশনা পেলে কোনো ভাবনা ছাড়াই কাজে নেমে পড়ে। নাহ, শুধু কাজে নেমে পড়ে বললে ভুল হবে। দিনরাত খেটে ওরা কাজটা শেষও করে।
সারাদেশের এই খেপাটে ভলান্টিয়ারদের অক্লান্ত পরিশ্রমে গণিত অলিম্পিয়াড, রোবট অলিম্পিয়াড আজ আন্তর্জাতিক পরিসরে বাংলাদেশকে আলাদা করে চিনিয়েছে। আর এসবের মূল শেকড় গাঁথা বিডিওএসএনেই।
চাকরি খুঁজব না, চাকরি দেব বিডিওএসএনের আরেকটি ইউনিক সৃষ্টি। দিনের পর দিন এর ব্যপ্তি বেড়েই চলছে। ব্যবসার জন্য, আত্মনির্ভরশীল হওয়ার জন্য নানা ধরণের পরামর্শ পেয়ে থাকেন এর সঙ্গে জড়িতরা। এসব পরামর্শ কাজে লাগিয়ে অনেকেই এখন স্বাবলম্বী।
‘মিসিং ডটার’। মেয়ে হারিয়ে যাচ্ছে। খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। অনেকটা এরকম ভাবনা নিয়ে একটি প্রজেক্টের কাজও শুরু করেছে বিডিওএসএন। আইটি নিয়ে পড়া মেয়েরা যাতে হারিয়ে না যায়, তারা যাতে নিজেদের ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবে, আত্মনির্ভরশীল হয় সেদিকে খেয়াল রাখাই প্রজেক্টের কাজ। অন্তত ১০ হাজার মেয়ে এখন বিডিওএসএনের নানা প্রশিক্ষণের সঙ্গে যুক্ত। সারাদেশের অন্তত ২৮টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কাজ করছে বিডিওএসএন।
বিজ্ঞানকে জনপ্রিয় করতেও নানা কাজ করে যাচ্ছে বিডিওএসএন। সারাদেশের বিভিন্ন স্তরের শিক্ষার্থীদের কোডিং, প্রোগ্রামিং শেখানোর কাজও করছে প্রতিষ্ঠানটি। এসব কাজে সরকারের অন্যতম অংশীদার বিডিওএসএন। কাজ করছে ব্রিটিশ কাউন্সিল বা আরডুইনোর মতো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও।
শিক্ষক, বিজ্ঞান চিন্তাবিদ, লেখক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল, বাংলাদেশের রোবটিক্সের পাইওনিয়ারদের একজন লাফিফা জামালের হাত ধরে নানা ধরণের কাজ সাফল্য দেখাচ্ছে বিডিওএসএন। তবে, ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো কাজের সূত্রপাত যার মাথা থেকে বের হয়েছে তিনি হচ্ছেন, মুনির হাসান। সবাইকে এক ফ্রেমে রেখে নানাভাবে কাজে লাগানোর কাজটা প্রায় একাই করেই যাচ্ছেন তিনি।
স্মৃতিচারণ করে বিডিওএসএনের শুরুর দিকের সহযাত্রী জাবেদ মোর্শেদ বলেন, ‘এখন মনে নাই ঠিক কবে থেকে বিডিওএসএন-এর সাথে জড়িত হয়েছিলাম, খুব সম্ভবত ২০০৬ বা ২০০৭। তবে, স্পষ্ট মনে আছে, সভা-সেমিনার আয়োজন, সারাদেশে ঘুরে বেড়ানো। সত্যিকার অর্থে ভলান্টিয়ারি বা স্বেচ্ছাশ্রমের বিষয়টাই শেখা বিডিওএসএন-এর সাথে কাজ করতে গিয়ে। আমি যখন বিডিওএসএন-এ সক্রিয়ভাবে ছিলাম, তখন আমরা মাত্র কয়েকজন ছিলাম, সবাই মিলে হইচই করতাম, এটা কাজ বা ভিশনের চেয়ে, মজা করার বা আড্ডা দেওয়ার জায়গাই বেশি ছিল। এখন বিডিওএসএন অনেক বড় হয়েছে, অনেক প্রোগ্রাম হয় দেখতে অনেক ভালো লাগে। দেশের বাইরে থাকায় অনেক ভালো কাজের সাথেই আর থাকতে পারি না, তবে যখনই কোনো ভালো খবর দেখি খুবই ভালো লাগে।’
কিশোর বয়স থেকেই বিকশিত হবার মাত্রা যেমন বাড়তে থাকে বিডিওএসএনও সেদিকেই এগুচ্ছে। আগামি দিনের এই যাত্রা আরো বর্নাঢ্যময় হবে সেই কামনায়….শুভ জন্মদিন।