Blog & News

Official blog of Bangladesh Open Source Network

কোন কাজে লেগে থাকার জন্য অনুশীলনের কোন বিকল্প নেই- নেটওয়ার্কিং সেশন ১ (পার্ট ২)

২৪ অক্টোবর আয়োজিত নেটওয়ার্কিং সেশনে অংশগ্রহণকারী চাকরি প্রত্যাশীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন তিনজন টেক প্রতিষ্ঠান প্রধান। সাথে ছিলেন বিডিওএসএন এর সাধারন সম্পাদক মুনির হাসান। প্রথম অংশের পর আজ দ্বিতীয় অংশ প্রকাশিত হল- 

মুনির হাসান- অংশগ্রহনকারীদের কথার ভিত্তিতে রাইসুল এবং কাওসার এর বক্তব্য শুনবো, “ভালো একজন ডেভেলপার হতে হলে কোন দিকে মনোযোগ দিতে হবে বেশি, প্রোগ্রামিং কন্টেস্ট নাকি শুরু থেকেই প্রজেক্ট করা?”


রাইসুল কবিরঃ আমি আমার এক্সপেরিয়েন্স শেয়ার করতে চাইবো। আমার প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রি হচ্ছে তড়িৎ কৌশল বিভাগে। স্বাভাবিক ভাবেই আমার কিংবা আমার বন্ধুদের কারো প্রোগ্রামিং এর জ্ঞান খুব বেশি ছিলোনা। আমি টিউশন করার সুবাদে এবং কিছু কোম্পানিতে কাজ করার কারনে কিছুটা প্রোগ্রামিং শিখেছি।
তবে আপনার এই প্রশ্নের উত্তরে আমি বলবো যে, প্রোগ্রামিং কন্টেস্ট খুবই গুরুত্বপূর্ন একটি অংশ। এর সাথে অন্য কিছুর তুলনা চলেনা। এই বিষয়ে বিভিন্ন মতামত রয়েছে, তবে কোনটাই ভুল নয়। তপু নেওয়াজ ভাইয়ের রেফারেন্স উল্লেখ করে একটা কথা বলবো, প্রথম বর্ষ থেকে স্নাতক শেষ করা পর্যন্ত সর্ব নিম্ন ২,০০০ ঘণ্টা অনুশীলন করতে হবে অন্তত পক্ষে প্রথম স্তর পর্যন্ত পৌঁছাতে। এই ২,০০০ঘন্টা বিষয় ভিত্ত্বিক যে কোন ধরনের অনুশীলন হতে পারে যেমন- কন্টেস্ট, প্রজেক্ট, অন্য কারোর জন্য সফটওয়্যার বানানো ইত্যাদি। শুধু মাত্র প্রজেক্ট বা কন্টেস্ট একক ভাবে যথেস্ট নয়। এর পরে যে যত বেশি সময় দিবে, তত অভিজ্ঞতার স্তর বাড়বে, কর্ম ক্ষেত্রে সুযোগ তত বাড়বে। মূল কথা হচ্ছে আপনাকে অবিরাম অনুশীলন চালিয়ে যেতে হবে।

networking 1


আমি প্রথম বার ব্রেইন স্টেশন-২৩ এর পরীক্ষার প্রশ্ন দেখে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। প্রশ্ন দেখে আমার অনেক কঠিন মনে হয়েছিল। এর কারণ হচ্ছে আমি কখনো প্রোগ্রামিং কন্টেস্ট করিনি, আর চাকরি পরীক্ষার সব প্রশ্ন ছিল কন্টেস্ট এর মতো। এবং পরবর্তীতে আমি জানতে পেরেছি যে এই প্রশ্নের উত্তর অনেকেই পেরেছে। আসলে এখানে মূল কথা হচ্ছে আপনি যদি প্রোগ্রামিং কন্টেস্ট করেন তাহলে ব্রেইন স্টেশন-২৩ তে জয়েন করতে আপনার জন্য সহজ হবে। শুধু ব্রেইন স্টেশন-২৩ না, যে কোন কোম্পানি যেমন- জুমশেপার, সেলিস ইত্যাদি সব গুলোতেই আপনার জন্য চাকরি পাওয়া সহজ হবে। কারণ সবার রিক্রুটমেন্ট পদ্ধতিতে প্রব্লেম সল্ভিং থাকে।


আমি যখন প্রশ্ন দেখে ভয় পেয়ে গেছিলাম, তখন আমার ভিতরে একটা হীনম্মন্যতা কাজ করছিল। যেহেতু কন্টেস্ট আগে কখনো করিনি, আসলে কি এটা পারব কিনা! সেই ভাবনা থেকে পরে আমি হ্যাকার র‍্যাংক নামে একটা সাইট আছে ওখানে প্রব্লেম সল্ভিং শুরু করি। শুধু এই একটা না, এরকম আরো অনেক ওয়েবসাইট আছে অনুশীলন করার জন্য। ওখানে কন্টেস্ট শুরু করার পরে দেখলাম যে আমি প্রব্লেম গুলো সল্ভ করতে পারতেছি। এমনকি আমি ১ঘন্টায় ৩-৪টা সমাধান করে ফেলতেছি।


আবার আপনার প্রশ্নে ফিরে আসি, আসলে কন্টেস্ট করছেন, নাকি প্রজেক্ট করছেন এটা কোন ব্যাপার না। আসল ব্যাপার হচ্ছে আপনি আপনার সময় কে ব্যবহার করছেন, এবং প্রোগ্রামিং এর পেছনে এই সময় ব্যয় আপনার খারাপ লাগছেনা। বন্ধুরা মিলে কন্টেস্ট করছেন এটা আপনার ভালো লাগছে, কোথাও পার্ট-টাইম কাজ করছে এটা আপনার ভালো লাগছে কিংবা কাউকে ফ্রী সফটওয়্যার বানিয়ে দিতেও আপনার ভালো লাগছে, এগুলো আসলে আপনার ইনভেস্টমেন্ট অই ২,০০০ ঘন্টা অর্জন করতে।


মুনির হাসানঃ তাহলে মূল কথা দাঁড়াল, অনুশীলন একমাত্র সমাধান। যে যেভাবে-ই প্রোগ্রামিং চর্চা করুক না কেন, তাকে সময় দিতে হবে, অনুশীলন করতে হবে এবং এর কোন বিকল্প নেই। এই কথার সাথে আসিফ এবং কাওসার তোমাদের মন্তব্য যোগ করতে পারো।


আসিফ এম রহমানঃ আমি প্রশ্নের দ্বিতীয় অংশ নিয়ে কিছু বলতে চাই যেটা ছিল “ ডেভেলপমেন্ট ভালোভাবে প্রজেক্ট করে শেখা যাবে কিনা?”। আমার ধারণা প্রজেক্ট এর এই প্রচলন টা এসেছে ফ্রীল্যান্সিং এর কাজ থেকে। আজকাল মানুষজন প্রথমেই ভাবে সে কাজ করবে, কিন্তু কি কাজ করবে সেটা নিয়ে এত বেশি ভাবেনা। প্রজেক্ট করে ডেভেলপমেন্ট শেখার ক্ষেত্রে এই বিষয়টা সবাইকে খুব বেশি প্রেরনা যোগায় যে আগেই কাজ করতে পারে কোন রকম শেখার সুযোগ না দিয়ে, যা খুবই মারাত্মক ব্যপার। শিক্ষার্থী-রা এই প্রশ্নটা অনেক সময় করে থাকে যে, সে পিএইচপি শিখেছে, কিভাবে এর সম্পর্কে আর বেশী শিখতে পারবে।


এখানে আমার পরামর্শ হচ্ছে, যেকোন জিনিস আগে ভালোভাবে শিখে তার পরে কাজ শুরু করা। সেটা হতে পারে বই পড়ে কিংবা বিস্তারিত শেখানো হয় এরকম টিউটরিয়ার দেখে। প্রজেক্ট অবশ্যই করতে হবে। কেননা প্রজেক্ট না করলে অর্জিত জ্ঞানের প্রোয়োগ করা যাবেনা। তবে প্রজেক্ট করার আগে শিক্ষার ভিত মজবুত করে নিতে হবে। কিন্তু তারা যদি না শিখে সরাসরি কাজ শুরু করে তাহলে আমাদের মতো প্রতিষ্ঠানে যেমন- এ আর কম, ডাব্লিউ পি ডেভেলপারস ইত্যাদিতে চাকরির জন্য লিখিত পরীক্ষা গুলোতে উত্তীর্ন হতে পারবেনা। কেননা আমদের প্রতিষ্ঠানে লিখিত পরীক্ষায় কেবল মাত্র ২০% সাধারণ জ্ঞান দিয়ে সমাধান করার মত প্রশ্ন দেয়া হয় এবং বাকি ৮০% থাকে বেসিক লেভেলের বিষয় ভিত্ত্বীক প্রশ্ন। তার মানে হচ্ছে, যে যেই বিষয়ে এপ্লাই করবে তাকে কমপক্ষে ৪০টি উত্তর ঐ বিষয়ে দিতে হবে। কেউ যদি ওয়ার্ডপ্রেস ডেভেলপারর হিসেবে এপ্লাই করে সেক্ষেত্রে তার জন্য পিএইচপি, জাভা স্ক্রিপ্ট সকল বিষয়ের-ও প্রশ্ন থাকবে। এখানে কোনটাই ট্রিকি প্রশ্ন হবেনা, সব গুলোই প্রাথমিক স্তরের হবে। আমাদের সাথে টিমে যারা কাজ করছে তারা বেশিরভাগ হয়তো প্রোগ্রামার কিংবা সিএসই বিষয়ে পড়াশুনা করেছে। আমরা দেখেছি যারা অতীতে কন্টেস্ট করেছে, বাকিদের তুলনার তাদের প্রব্লেম সলভিং এর দক্ষতা তীক্ষ্ণ হয়। কারণ তারা অনেক বেশি অনুশীলন করেছে।


এখানে রাইসুল ভাইয়ার সাথে আমি একমত হয়ে বলবো, শুধুমাত্র প্রোগ্রামিং না, লাইফে যেকোন কিছুতে যথেষ্ট পরিমাণ চেষ্টা না থাকলে কখনোই সফলতা পাওয়া যাবেনা। আর সবাইকে প্রোগ্রামার হয়ে যেতে হবে এমন কিছু না, যে কেউ যেকোন ব্যগ্রাউন্ড থেকে মার্কআপ ইঞ্জিনিয়ার হয়ে যেতেই পারে। তবে যেটাই হোক সব কিছুর মূলে থাকতে হবে চেষ্টা এবং অনুশীলন। আমার পরামর্শ হবে যে কেউ প্রজেক্ট ভেবে কাজ শুরু না করে আগে শেখার চেষ্টা করা। যেকোন প্রোগ্রামিং ভাষার প্রাথমিক স্তর থেকে শিখতে শুরু করা যেমন- সিনট্যাক্স গুলো কি, কিভাবে প্রত্যেক টা জিনিস কাজ করে ইত্যাদি।


আমি যখন ছোট বেলায় প্রথম প্রোগ্রামিং এর ভাষা শিখেছিলাম, আমার প্রথম শেখা ভাষা ছিলো কিউ বেসিক, যেটা কিনা এখন চতুর্থ-পঞ্চম শ্রেনীর বাচ্চারও পারে। অনেকের মতে ওটা আসলে কোন প্রোগ্রামিং এর ভাষা নয়, ওটা শুধু মাত্র লজিক শিখতে সহযোগিতা করে। আসলে লজিক, সিনট্যাক্স এগুলো সবই প্রাথমিক স্তরের জিনিস। একে অপরের সাথে যুক্ত। সব বেসিক ভালোভাবে জেনে নিয়ে এর পরে প্রজেক্ট করতে শুরু করা উচিত। সেটা হতে পারে কারো জন্য ফ্রী সফটওয়্যার বানিয়ে কিংবা পার্টাইম কাজ করে এমনকি ফ্রিল্যান্সিং করেও। কাওসার ভাইয়ার ক্ষেত্রে এটার উদাহরন হচ্ছে তার অডিও প্লেয়ার নিয়ে বানানো একটা প্রজেক্ট, আমার ক্ষেত্রে এটা ওয়ার্ডপ্রেস কোর টিমে কিছু অবদান রাখা এছাড়াও অনেকের ক্ষেত্রে অনেক কিছুই হতে পারে। সবশেষে বলবো যা কিছুই করা হোক, যেকোন কাজে লেগে থাকার কোন বিকল্প নেই, এটাই হচ্ছে গুরুত্বপূর্ন টিপস।
কাওসার আহমেদঃ আপনার প্রশ্নের প্রেক্ষিতে অনেক কিছুই আলোচনা করা হলো। প্রায় সব কিছুই বলা শেষ। এগুলো শুনে হয়তো লোকজন ভাববে, “এগুলো তো সবাই বলে, নতুন কিছুনা”। ব্যপারটা আসলেই তাই, এগুলো নতুন কোন কথা না। যেকোন কাজে লেগে থাকার আসলেই কোন বিকল্প নেই।


আমার জীবনের একটি ছোট্ট ঘটনা শেয়ার করছি, ২০০৬ সালের দিকে যখন আমি প্রথম প্রোগ্রামিং শুরু করি তখন এই বিষয়টা আমার এতটাই ভালো লেগে যায় যে কখনো কখনো আমি সারারাত জেগে-ও প্রোগ্রামিং করতাম। আমি প্রোগ্রামিং এ এতটাই মগ্ন হয়ে গিয়েছিলাম যে রাতেএ প্রোগ্রামিং করতে করতে আমার সকালে ঘুম্থেকে উঠতে দেরি হয়ে যেতো এবং আমি আমার সকালের ক্লাস করতে পারতাম না। সকালের ক্লাস অনবরত না করারা ফলে আমি ৩য় বর্ষের পরীক্ষায় অংশ নিতে পারিনি। স্নাতক শেষ করতে প্রয়োজনের তুলনায় এক বছর দেরি হয়ে কেবলমাত্র প্রোগ্রামিং এর প্রতি আমার ভালোবাসার কারণে। এই উদাহরণ দেয়ার একটাই কারণ, আর সেটা হচ্ছে কোন কিছু পাওয়ার জন্য ধৈর্য এবং লেগে থাকা জরুরী, এর কোন বিকল্প নেই। সে যে ধরনের কাজ ই হোক না কেন।


চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে নবীনদের জন্য কোন কাজ কিংবা পরাশুনা ঠিক কীভাবে শুরু করবেন এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে চাই। আমি যেহেতু একজন উদ্যোক্তা, আমাদের প্রতিষ্ঠানে নতুনদের নিয়োগের ক্ষেত্রে আমরা যে সকল জিনিস মেনে চলি সেগুলোই শেয়ার করবো। আমরা শুধুমাত্র প্রোগ্রামার নিয়োগ দেই সেটা কিন্তু না, আমাদের কোম্পানিতে প্রায় ৬-৭ টি ডিপার্টমেন্ট রয়েছে যেগুলো সরাসরি প্রোডাক্ট এর সাথে সম্পর্কিত। অধিকাংশ ক্ষেত্রে আমরা প্রোগ্রামার সরাসরি নিয়োগ দেইনা নবীনদের নিয়োগ দিয়ে থাকি। আমরা সাধারনত সাপোর্ট ইঞ্জিনিয়ার, ফ্রন্ট এন্ড ডেভেলপার, প্রোডাক্ট ডিজাইনার, ইউএক্স ডিজাইনার হিসেবে নবীনদের নিয়োগ দিয়ে থাকি, এবং এই পদগুলোতে তুলনামূলক ভাবে ঢোকা সহজ।


প্রোগ্রামিং জানা থাকলে শুধুমাত্র প্রোগ্রামারই হতে হবে অন্য কোনো পদে চাকরি করা যাবে কিনা এ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে আসিফ এম রহমান উত্তরে বলেন-


আসিফ এম রহমানঃ সত্যি কথা বলতে আমি নিজে ইলেকট্রিকাল এন্ড টেলিকমিনিউকেশন ইঞ্জিনিয়ারিংএ ।আমি হয়ত নিজেই ভালো প্রোগ্রামার না। আমি একটাই ভাষা ভালোভাবে জানি সেটা হলো ইউনিক সি, যা দিয়ে এখনো পর্যন্ত কোনো কিছু তৈরি করা সম্ভব না কিন্তু একটি ভাষায় ভালোবাসা তৈরি হলে বাকি সবগুলাই আয়ত্ত করা সম্ভব। একটি কোম্পানি তে প্রোগ্রামার ছাড়াও আরো অনেক পদ থাকে যেখানে কাজ করা যায়। প্রোগ্রামিং ডিপার্ট্মেন্টের অনেকেরই সিএসই ডিগ্রী থাকেনা কিন্তু সাপোর্ট ডিপার্ট্মেন্টে প্রায় সবারই সিএসই ডিগ্রী থাকে। তাই প্রোগ্রামিং ছাড়াও অন্য যেকোনো পদে চাকরী পাওয়া সম্ভব।


মুনির হাসানঃ প্রোগ্রামিং যদি ভালো ভাবে শেখা থাকে তাহলে শুধু প্রোগ্রামিংই করতে হবে এমন তো না। সে এই প্রোগ্রামিং ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে কোন কোন দিকে ক্যারিয়ার বাঁচাই করতে পারে?


আসিফ এম রহমানঃ আমি ইটিই থেকে আমার পড়ালেখা শেষ করেছি।আমি শুধু ইউনিক সি ভালো করে জানতাম। একটা স্টুডেন্ট যদি একটা প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজে ভালোভবে দক্ষ হয় তাহলে সে যেকোন ল্যাংগুয়েজ শিখতে পারবে।একটা প্রতিষ্ঠানে প্রোগ্রামার ছাড়া আরো অনেক মানুষের দরকার হয়। আমি একটা পণ্য তৈরি করি এবং পন্যটা যারা ব্যবহার করবে তাদের জন্য সেটার ডেপ্লইমেন্ট এবং সাপোর্ট দিয়ে পণ্য টার ব্যাবসা সফল করা। কিন্তু সে পণ্যের প্রমোশনাল ভিডিও বা টেকনিক্যাল সাপোর্টের জন্যও তো লোক লাগে। আমাদের প্রোগ্রামিং টিমএর অনেকেই সিএসসি ডিপার্টমেন্ট এর কিন্তু সাপোর্ট ডিপার্টমেন্ট এর অনেকেই সিএসসি ডিপার্টমেন্ট এর না। দেখা যায় সবাই ভালোভাবে প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ পারেনা কিন্তু তবুও সবাই ভালো কাজ করছে। ৫জন সাপোর্ট কর্মীর জন্য একজন লিড। দেখা যায় সেই তাদের বেতন প্রোগ্রামিং ডিপার্টমেন্ট এর কর্মী দের চাইতে বেশি।একটা প্রোডাক্ট এর কোড কিভাবে হয় সেটা সবাই জানতে চাইনা কিন্তু টেকনিক্যাল সাপোর্ট কিভাবে পায় সেটা মানুষ মনে রাখে এবং মানুষকে বলে।এখন দেখা যায় প্রত্যেক কোম্পানির এমন কিছু ইন হাউজ সাপোর্ট টিম থাকে কিন্তু আজ থেকে ৫-৬ বছর আগে এমন ছিলো না সবাইকে বাইরের ফ্রি-ল্যান্সিং এর উপর নির্ভর করতে হতো। এসবের সুযোগ অনেক বেড়েছে এখন। অনেক টেকনিক্যাল মানুষ প্রয়োজন। সিএসসি ব্যাকগ্রাউন্ডের কর্মীদের জন্য আমরা এখন ৩ মাস ব্যাপি কিছু ট্রেইনিং এর আয়োজন করি। সিএসসি ব্যাকগ্রাউন্ডের হলে তারা কম্পিউটারে অনেক ব্যাসিক জানে। তারা ভাইলে প্রোগ্রামিং টিম থেকে জাভা, পিএইচপি ইত্যাদি শিখে নিতে পারে। আমাদের কাছে কিছু সিএসসি ব্যাকগ্রাউন্ডের কর্মী আছে যারা প্রোগ্রামিং তেমন কিছু পারে না তাই সাপোর্ট টিমে যোগ দিয়েছে কিন্তু পরে সিনিয়র বা ট্রেইনিং এর মাধ্যমে প্রোগ্রামিং শিখে এবং গিট, প্যাচ জাতিয় কাজ নিজে নিজে করে ফেলে। দেখা যায় এক সময় তারা মিড লেভেল প্রোগ্রামারে প্রমোটেড হয়ে গিয়েছে।


মুনির হাসানঃ আমি এটাই বলতে চাই যে, সিএসসি পড়ে প্রোগ্রামারই হতে হবে এমন না। চাইলে টেকনিক্যাল লাইনেও যাওয়া যাবে। গ্রেজুয়শন শেষে টেক কোম্পানি গুলোতে ইন্টার্নশিপ এর সুযোগ কেমন? ইন্টার্নশিপ করা কি দরকার?


কাওসার আহমেদঃ আমরা ইতিমধ্যে তিন জন ইন্টার্ন নিবো যা হয়তো ছয়জনই করে নিবো। আমাদের টেক কোম্পানিগুলোতে স্টুডেন্টদের সঠিক দিক প্রদর্শনের একটা দায়িত্ব রয়েছে। আমাদের এখন অফিস স্পেস সিমিত কিন্তু অতি শীঘ্রই আমরা নতুন অফিস স্পেস নিচ্ছি যেখানে অনেক ধরনের হাব থাকবে যা আমাদের অনেক ইন্টার্ন নেয়ার সুযোগ করে দিবে। এখন আমরা ভার্চুয়াল ইন্টার্ন নিবো যদি তাদের পারফর্মেন্স ভালো থাকে তাহলে তাদের পারমানেন্ট করে নিবো। আমি পার্সোনালি সিভিতে দুটো জিনিস লক্ষ করি- টেকনিক্যাল ব্যাস এবং ইংরেজি দক্ষতা।


রাইসুল কবিরঃ আমরাও প্রায় সময় ইন্টার্ন নিয়ে থাকি। যারা পাইথনে কাজ করতে পারে কিনা। আমি যেহেতু স্টুডেন্ট লেভেল থেকে কাজ করে আসছি তাই আমি স্টুডেন্ট লেভেল ইন্টার্নই দেখি। বাংলাদেশের অনেক কোম্পানিতেই ইন্টার্নশিপ এর ব্যবস্থা রয়েছে। আমি মোট দুটো কোম্পানিতে ইন্টার্ন করেছি। অনেকই চিন্তা করে প্রথম চাকরির প্রথম বেতনের ব্যাপারটা কিন্তু যখন যেখানে সুযোগ পাওয়া যায় সেখানেই নিয়ে নেওয়া উচিত। আমাদের কোম্পানিতে পেইড এবং নন পেইড ইন্টার্ন এর ব্যাবস্থা আছে। আমরা একটা প্রাথমিক পরীক্ষা নেই এবং যারা পাশ করে তাদের পেইড ইন্টার্ন এর ব্যাবস্থা করে দেই এবং যারা পাশ করে না তাদের নন পেইড। যে যেখানেই থাকে না কেন, কিছু একটা শেখার মনমানসিকতা থাকতে হবে। ইন্টার্ন এর জন্য কোম্পানির কিছু খরচ রয়েছে। সত্য বলতে প্রোগ্রামিং অনেক সহজ আর সব চাইতে সহজ হচ্ছে ইন্টেলিজেন্ড মানুষদের জন্য। ইন্টেলিজেন্স কিন্তু বাড়ানো সম্ভব। মুনির হাসান স্যার সব সময় একটা কথা বলে, ”বই পড়ো”।বিভিন্ন কোম্পানিতে ইন্টেলিজেন্স এবং স্মার্টনেস বাড়ানোর চেষ্টা করে এবং এসেট হিসেবে গড়ে তুলে। যেমন কাজি আইটি তাদের প্রত্যেক ইন্টার্নকে এক সপ্তাহে একটি করে বই পড়তে বলে কিন্তু এক সপ্তাহে একটি বই পড়া কঠিন তাই তারা বই গুলোর রেকরডিং শুনতে বলে। পরে এই বইয়ের উপর একটি প্রেসেন্টেশন দিতে বলে। পরে আমি তাদের ইন্টারভিউ নিয়ে অবাক হয়ে গেলাম তাদের চিন্তা ধারার পরিবর্তন দেখে। দেখা যায় তারা আমার চাইতেও ভালো চিন্তা করছে। ঠিক তেমনি ইংরেজি বলার দক্ষতা বাড়নোও সম্ভব। জীবনে উন্নতি করতে হলে আমার অপোসিট মানুষটাকেও ভালোবাসতে হবে। মানুষ জীবনে সফল হয় সততা এবং তার পাশের মানুষ গুলোকে ভালোবেসে এবং তাদের খেয়াল রেখে।


কাওসার আহমেদঃ যদি কাউকে কোনো কোম্পানিতে আট ঘন্টার পারিশ্রমিক দেয়া হয় তাহলে তারা চেষ্টা করে সেই আট ঘন্টাই কোম্পানি তে কাজ করতে। আমি মনে করি কোম্পানি যদি আপনাকে আট ঘন্টার জন্য কম পারিশ্রমিকও দেয় তবু আপনার সর্বোচ্চ কাজ করা উচিত কারন আপনি যে পরিশ্রম করবেন সেটা কখনো বৃথা যাবেনা। জীবনে যারা সফল হয়েছে তারা কেউ গতানুগতিক ধারায় সফল হয়নি। পৃথিবীতে একজন মানুষও এমন পাওয়া যাবেনা যে পরিশ্রম ছাড়া সফল হয়েছে।


নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পর্কে মুনির হাসান জনাব আসিফ এম রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের ক্ষেত্রে এখন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় আমাদেরই একটি টুলস ইজি ফর জবস ব্যবহার করি। এই টুলসে এআই নামে একটি বৈশিষ্ট্য আছে যাতে প্রার্থীরা সিভি বা ফর্ম পূরন করার সময় যা যা লিখতে হয় তা খুব সহজেই করা যায়। আমাদের এখন নিয়োগ প্রক্রিয়া ১০০% অনলাইন। তবে অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় অনেকে একটু টাইম নিয়ে একটা কভার লেটারও লিখেনা। আমরা যখন ইজি জবস বানাই তখন ইচ্ছা করেই প্রক্রিয়াটি অনেক লম্বা রেখেছি শুধুমাত্র কেউ এটি ধৈর্য ধরে করছে কিনা এটি দেখার জন্য। যদি কেউ একটি চাকরি নিশ্চিত করার জন্য এটুকু সময় দিতে না পারে তাহলে তাকে আমাদের দরকার নাই। কারন আমরা একজন টিম মেম্বার চাই যে আমাদের কোম্পানিটাকে বড় করতে সাহায্য করবে।


এ বিষয়ে কাওসার আহমেদ বলেন, আমার মনে হয় আমাদের নিজেদেরই আত্মবিশ্বাসের অভাব যে আমি আসলে এই জবটি পাব কিনা এই জন্যই আমাদের জীবনের ৪০ মিনিট ও আমরা ব্যয় করতে চাই না। যদি কেউ মনে করে যে আমি এই জবটির জন্য সঠিক প্রার্থী তাহলে এই আত্মবিশ্বাসটি তার মধ্যেই ফুটে উঠবে। যে কোনো জব পাওয়ার ক্ষেত্রে এই আত্মবিশ্বাসটি থাকা অত্যন্ত জরুরি।


সবশেষে, জনাব মুনির হাসান আলোচনাতে উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে আলোচনাটি সমাপ্ত করেছেন।