এদেশের পরিবেশ বা পারিপার্শ্বিকতা নারীর চলার জন্য সহজ নয়। অনেক নারীই নানাকারণে পরিবার ছেড়ে বের হতে পারেন না। অথচ এই পরিস্থিতিতে ভেঙে না পরে অনেকেই ঘরে থেকেই নিজের বিকাশ ঘটিয়েছেন। আইসিটি এমন একটি সেক্টর কাজ জানা থাকলে ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে ঘরে থেকেও নিজের যোগ্যতার প্রমাণ দেওয়া যায়। এইসব কিছু নিয়ে আলোচনা করেন এই সেশনের অতিথিরা।
এমরাজিনা টেকনোলজিসের কো ফাউন্ডার ও পেওনিয়ার বাংলাদেশের ব্রান্ড অ্যাম্বেসেডর এমরাজিনা ইসলামের সঞ্চালনায় সেশনে অংশ নেন, বীটেকনোলজির সিনিয়র সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার সাইদুন্নেসা, অনলাইন কন্টেন্ট রাইটার অজন্তা রেজয়ানা, গ্রাফিক ডিজাইনার আফরোজা সিদ্দিক।
সায়েদুন্নেসা: যেকোনো কাজ শুরু করার আগে যেমন কাউকে ফলো করা ও একটি প্লাটফর্ম ধরে শুরু করতে হয়। একইরকম ফ্রিল্যান্সিংয়ের ক্ষেত্রেও। ফ্রিলান্সিং এ ভাল করতে হলে প্রথমে ক্লায়েন্টের কাজের ধরণ ও তাদের রিকয়ারমেন্টগুলো নিয়ে স্টাডি করা দরকার। এছাড়া, বিভিন্ন সাইটের কাজের ধরণ দেখে কোন কাজগুলোর চাহিদা কেমন তা জানা দরকার।
আমার কাজের শুরু হয় একটি লাইব্রেরি এপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট দিয়ে। প্রথম দিকে অনেককিছু না জেনে কাজ শুরু করলেও পরে বিভিন্ন ক্লায়েন্টের সঙ্গে কাজ করে নিজের কাজের বিষয়ে সতর্ক হই। একসময় মনে হল প্রতিটা কাজের জন্য আলাদা পোর্টফোলিও দরকার। এরপর কাজের পোর্টফোলিও বানিয়ে বিভিন্ন কাজে বিট করা শুরু করি।
তবে, কেউ যদি ওয়েব ডেভেলপমেন্ট নিয়ে কাজ করে তাহলে তার কোডিং এর প্রতি আগ্রহ থাকতে হবে। পিসিতে বসে দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করার ধৈর্য্য থাকতে হবে। সমস্যা সমাধানের অভ্যাস থাকতে হবে।
ফ্রিলান্সিং দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করে এখন সফটওয়ার ডেভেলপমেন্ট, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, এন্ডয়েড অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট নিয়ে কাজ করি। আপওয়ার্ক ও ফাইভার এ কাজ করা হয়। পাশাপাশি বি-টেক এন্ড রিসার্স হাব নামে একটি আইটি ফার্মের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করার কথা জানান সায়েদুন্নেসা।
অজন্তা রেজওয়ানা: কাজের শুরু প্রায় ৫-৬ বছর আগে ডকুমেন্ট রাইটার হিসেবে। প্রথমে অডিও শুনে লেখার প্র্যাকটিস করতাম। পরে বিভিন্ন ওয়েব কন্টেট ও ব্লগ লেখার কাজ শুরু করি। তবে, ই-বুক লেখার কাজ আমার খুব পছন্দ। বর্তমানে আমাজনে ও কিঞ্জেলে ওয়েব কন্টেট ও নিউজ লেটার নিয়ে কাজ করি। পাশাপাশি ছোট খাট এজেন্সি খুলে ৪-৫ জন স্টুডেন্টকে কাজ শেখাই।
কাজের শুরুতে অনলাইন ঘেঁটে বিভিন্ন লেখার স্টাইল ফলো করি। ক্লায়েন্টের রিকয়ারমেন্ট নিয়ে ঘাঁটাঘাটি করি। কোনো টপিক লেখার আগে সেই রিলেটেড কমপক্ষে ১০০ টির মত টপিক নিয়ে স্টাডি করতে হয়। ক্লায়েন্টের চাহিদা অনুযায়ী লিখতে একেকটা স্টাইল ফলো করতে হয়। এক্ষেত্রে আমাজন রিভিওগুলো স্টাডি করলে ভাল ধারণা পাওয়া যায়। লেখা ভাল করার জন্য নিদির্ষ্ট কোনো ফন্ট নাই, লেখা ক্লিয়ার হলেই হবে।
সবার আগে অনলাইনে নিজের পোর্টফোলিও ভারি করা দরকার। তবে, যেকোনো কাজে স্কিল বাড়াতে হলে কাজটার প্রতি আগ্রহ থাকা উচিত। তাহলে কাজটা আর কঠিন লাগবে না। পরিস্থিতি যেমনই হোক না কেন ফ্রিল্যান্সিংয়ে কাজ জানা থাকলে তাকে বসে বসে কারো বোঝা হতে হবে না।
আফরোজা সিদ্দিক: শারীরিক অসুস্থ্যতার জন্য ভাল কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারিনি। এ কারণে খুব ডিপ্রেশনে ভুগতাম। পরে একটি কোচিংয়ে ভর্তি হয়ে ফ্রিল্যান্সিং কাজ শিখি। এরপর আপওয়ার্ক,ফাইভারসহ বিভিন্ন প্লাটফর্মে কাজ করি। গ্রাফিক্স নিয়ে কাজ করতে হলে আগে ডিজাইন নিয়ে পড়াশুনা দরকার ও বিভিন্ন ডিজাইন ঘেঁটে নিজে বানানোর চেষ্টা করা উচিত। এতে নিজের স্কিল বাড়ে।
শুধু কাজ শুরু করতে চাইলেই হবে না। তার আগে ঠিক করা দরকার আপনি কি পারবেন বা আপনার কাজের প্রতি কতটুকু আগ্রহ আছে।
আমার কাজ ভাল করার পেছনে অনেক বড় সাপোর্ট ছিল আমা পরিবার। নিজের পরিবার ও সাপোর্টের জন্য মেয়েদের স্বাবলম্বী হওয়া প্রয়োজন। ইচ্ছা থাকলেই সমাজের অনেক বাধা অতিক্রম করে অনেক ভাল কিছু করা যায়।
সঞ্চালনার বিভিন্ন পর্যায়ে এমরাজিনা ইসলাম বলেন, অনেক মেয়ে এই সেক্টরে এসে তারা নিজেদের যোগ্যতার পরিচয় দিচ্ছে। সবার হয়তো সমান সুযোগ হবে না। তবে, ফ্রিল্যান্সিং করেও মেয়েরা এগিয়ে যেতে পারে। এই সেশনে যারা অংশ নিয়েছেন তাদের দেখেও মেয়েরা এগিয়ে যেতে পারে। সবকিছুর পরে প্রথম কথাটি হচ্ছে কাজ জানতে হবে। নিজেকেই এগিয়ে যেতে হবে।