শাহেদা মুস্তাফিজ। বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রোগ্রামার। এ দেশের টেকনোলজি জগতে অন্যতম একটি নাম।
তিনি পড়াশোনা করেছেন অর্থনীতিতে। পরে যুক্তরাষ্ট্রের এনসিআর করপোরেশনে সফটওয়্যার আর্কিটেকচার নিয়ে এক বছরের প্রশিক্ষণ নেন। ১৯৭৬ সালে সেই প্রতিষ্ঠানের বাংলাদেশ শাখায় সিস্টেমস ম্যানেজার হিসেবে তার কর্মজীবন শুরু হয়। পরে বাংলাদেশে এনসিআরের কার্যক্রম লিডস করপোরেশন কিনে নিলে, লিডসে শুরু হয় তার কাজ।
শাহেদা মুস্তাফিজ
প্রথমে এনসিআর ও পরে লিডসে ২২ বছর কাজ করে ১৯৯৮ সালে ইস্তফা দেন শাহেদা মুস্তাফিজ। এরপর দাঁড় করান নিজের প্রতিষ্ঠান প্রবিতি সিস্টেমস লিমিটেড। কাজ করেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে। তার এই প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ থেকে সফটওয়্যার রপ্তানিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এছাড়া তিনি কানাডার টোয়েন্টি-টোয়েন্টি টেকনোলজিস ইনকরপোরেটেডের বাংলাদেশ শাখায় ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং যুক্তরাষ্ট্রের ই-টেকলজিকস ইনকরপোরেটেডের বাংলাদেশ শাখায় নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেছেন। কাজের বাইরে তিনি শিশুদের জন্য এবং বিশেষ করে নারীদের জন্য কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পরিচালনা করেছেন।
শাহেদা মুস্তাফিজ মনে করেন, তথ্য প্রযুক্তির বিকাশের জন্য বর্তমান সময়টা চমৎকার। তবে চার দশক আগে এই অবস্থা ছিল না। ওই সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার বিজ্ঞান পড়ানো হতো না। তবে, ৪০ বছর আগের সঙ্গে তুলনা করলে বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তিতে নারীদের অংশগ্রহণ বেড়েছে। তবে উল্লেখযোগ্য হারে না। এর কারণ হিসেবে তিনি মনে করেন, নারীদের দুটো সমান্তরাল জীবন আছে, দুটোই গুরুত্বের সঙ্গে চালাতে হয়।
তিনি বলেন, ‘গত ৪০ বছরে দেশ সব দিক দিয়েই এগিয়েছে। শুধু নারীদের কাজটা এখনো সেই আগেরমতোই আছে। এখনো সন্তান-সংসারের পুরো দায়িত্ব নারীর একার। আমাদের কর্মজীবন আর পারিবারিক জীবনের মধ্যে ভারসাম্য করে চলতে হয়। আর কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ের জন্য পুরোটা সময় এর ভেতরেই থাকতে হয়। আমাদের সমাজে এটা সব সময় সবার পক্ষে সম্ভব হয় না।’
তিনি বলেন, প্রোগ্রামিংয়ে নারীরা কম আসে ঠিকই, তবে যারা আসে তারা কিন্তু খুব ভালো কাজ করে। আমার দলে অনেক নারী কর্মী কাজ করেছেন। এই দলটা চমৎকার কাজ করত।’
এডা লাভলেস সেলিব্রেশনের সম্মাননা অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের সঙ্গে শাহেদা মুস্তাফিজ
দেশের ব্যাংকিং খাত অটোমেশনে সফটওয়্যার তৈরিতে অগ্রণী ভূমিকা আছে তার। দেশের ব্যাংকিং খাতে তারই তৈরি প্রথম সফটওয়্যার এনসিআর ব্যাংক, যা পরে পিসি ব্যাংক নামে পরিচিতি পায়। তারই ধারাবাহিকতায় দেশের হাসপাতালগুলোকেও অটোমেশনে আনতে চান তিনি। তাহলে জীবনে দুটো অর্জন থাকবে বলে মনে করেন অবসরে যেতে চাওয়া শাহেদা মুস্তাফিজ।
এ বছরের ২ জানুয়ারি এশিয়া প্যাসিফিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিটোরিয়ামে বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্ক-বিডিওএসএনের উদ্যোগে প্রথম বারোর মতো আয়োজিত হয় অ্যাডা লাভলেস সেলিব্রেশন। সেখানেও উপস্থিত ছিলেন দেশের তথ্য প্রযুক্তি খাতের এই পথিকৃত। সেই অনুষ্ঠানে তিনি জানান, কম্পিউটার প্রোগ্রামিং-এ মেয়েদের মেন্টরিং ও টেকনিক্যাল সাপোর্ট দেবেন আগামী দিনগুলোতেও।
বর্তমানে ছেলের প্রতিষ্ঠানে উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছেন দেশের প্রথম নারী প্রোগ্রামার শাহেদা মুস্তাফিজ।