রিয়ার অ্যাডমিরাল গ্রেস মুরে হপার একজন মার্কিন কম্পিউটার বিজ্ঞানী ও গণিতবিদ। কম্পিউটার প্রযুক্তির প্রাথমিক পর্যায়ে অবদানের জন্য তিনি বিখ্যাত হয়ে আছেন। তিনি প্রথম কম্পাইলার ও কোবোল প্রোগ্রামিং ভাষা উদ্ভাবন করেন।
মাতামহের উৎসাহে গণিত ও জ্যামিতি বিষয়ে গ্রেসের আগ্রহ জন্মায়। ১৯২৪ সালে তিনি নিউ ইয়র্কের পৌকিপ্সিতে অবস্থিত ভাসার কলেজে ভর্তি হন। তার প্রধান আকর্ষণ ছিলো গণিত, পদার্থ বিজ্ঞান, ও প্রকৌশল। এখান থেকে ১৯২৮ সালে স্নাতক পাসের পর তিনি ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন, এবং সেখান থেকে গণিত ও গাণিতিক পদার্থবিজ্ঞানে ১৯৩০ সালে মাস্টার্স, এবং ১৯৩৪ সালে ডক্টরেট ডিগ্রি নেন। তার ডক্টরেট প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিলো "A New Criterion for Reducibility of Algebraic Equations"।
১৯৩১ সালে গ্রেস হপার ভাসার কলেজে শিক্ষকতা শুরু করেন। সেখানে ধীরে ধীরে তিনি প্রভাষক, সহকারী অধ্যাপক, ও সহযোগী অধ্যাপকের পদে পদোন্নতি পান। ১৯৪১ সালে তিনি ভাসার ফ্যাকাল্টি বৃত্তি নিয়ে নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের কুরান্ট ইন্সটিটিউটে এক বছরের জন্য গবেষণা করতে যান। এ সময় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলছিল। ১৯৪৩ সালের ডিসেম্বর মাসে গ্রেস হপার মার্কিন নৌবাহিনীতে যোগ দেন এবং ১৯৪৪ সালের জুন মাসে লেফটেন্যান্ট, জুনিয়র গ্রেড, হিসাবে কমিশন পান।
এর পর পরই গ্রেস হপার হাওয়ার্ড আইকেনের সংস্পর্শে আসেন। আইকেন তখন মার্কিন নৌবাহিনীর জন্য মার্ক-১ নামের একটি কম্পিউটার তৈরি করছিলেন। হপার এই কম্পিউটারটির ম্যানুয়াল লিখেন। এর পর তিনি এটিকে প্রোগ্রামিং করার কাজ শুরু করেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বোমা ফেলার পরে, হপার যুদ্ধে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তবে ছোট আকৃতির কারণে প্রথমে প্রত্যাখ্যাত হলেও তিনি জেদ ধরেছিলেন। ভাসার থেকে অনুপস্থিতির ছুটি নিয়ে ১৯৪৩ সালের ডিসেম্বর মাসে মার্কিন নৌ-রিজার্ভে (উইমেনস রিজার্ভ) যোগ দেন হপার। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যুরো শিপস কমপ্যশন প্রকল্পে নিযুক্ত হন।
যুদ্ধ শেষে গ্রেস হপার নৌবাহিনীর সক্রিয় দায়িত্ব থেকে সরে আসেন, কিন্তু হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে হার্ভার্ড মার্ক ২ ও মার্ক ৩ যন্ত্রগণকের উপরে কাজ করেন। মার্ক-২ এর উপরে কাজ করার সময় তিনি একটি বিকল রিলে যন্ত্রাংশের মধ্যে একটি মথ (প্রজাপতি) খুঁজে পান, যা সেটিকে বিকল করে দিয়েছিলো। এই মথটির কথা হপার লগবুকে উল্লেখ করেন (মথটি সহ), এবং এই ঘটনা হতেই কম্পিউটারের সমস্যা বা ত্রুটিকে বাগ Bug (পোকা) বলা হয়ে থাকে।
তিনি যখন ৭৯ বছর বয়সে রিয়ার অ্যাডমিরাল হিসাবে অবসর নিয়েছিলেন। হপার মার্কিন সশস্ত্র বাহিনীর সবচেয়ে বয়স্ক সার্ভিসিং অফিসার ছিলেন। অবসরের পরও নতুন একটি চাকরি নিয়ে আরও বেশ কয়েক বছর কম্পিউটার শিল্পে থেকে যান। তিনি ৪০ টিরও বেশি সম্মানসূচক ডিগ্রি অর্জনকারী এবং তার সম্মানে অনেক বৃত্তি, পুরষ্কার এবং সম্মেলনগুলির নামকরণ করা হয়েছিল। ১৯৭২ সালে তিনি ইয়েলের উইলবার লুসিয়াস ক্রস পদক পেয়েছিলেন। ১৯৯১ সালে রাষ্ট্রপতি জর্জ বুশ হ্যাপারকে জাতীয় পদক দিয়েছিলেন। ৮৫ বছর বয়সে, তিনি ১ জানুয়ারী, ১৯৯২ এ ভার্জিনিয়ার আর্লিংটনে মারা যান।