আইসিটি সেক্টরে এদেশের মেয়েরা কিভাবে ক্যারিয়ার গড়তে পারে, কিভাবে সফল হতে পারে অথবা নিজেদের স্থিতিশীল অবস্থান ধরে রাখতে কি করণীয় সেসব নিয়ে এই সেশনে কথা বলেন আইসিটি সেক্টরের চারজন প্রতিষ্ঠিত নারী। দীর্ঘ যাত্রায় নিজেদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরার পাশাপাশি, একজন আরেকজনকে প্রশ্নোত্তরের মাঝেও ওঠে আসে নানা কথা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোবোটিকস ও ম্যাকাট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের অধ্যাপক ও বিডিওএসএনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ড. লাফিফা জামালের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অংশ নেন, গ্রামীণফোনের টেকনোলজি ট্রান্সফর্মেশন প্রধান শায়লা রহমান, রাইড শেয়ারিং পাঠাওয়ের মার্কেটিং হেড সৈয়েদা নাবিলা মাহবুব, স্টার কম্পিউটার সিস্টেম লিমিটেডের সিইও রেজওয়ানা খান।
ড. লাফিফা জামাল: কারো পরিবার সাপোর্ট না দিলেও নিজেকে নিজের স্বপ্নের জায়গায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব। আইসিটির মাধ্যমে নিজেকে আগানোর অনেক সুযোগ আছে। যত বিরুপ অবস্থাই তৈরি হোক না কেন আইসিটি জানা থাকলে নিজের কাজ চালিয়ে নেওয়া যায় এবং সফল হওয়া যায়। এই প্যানডেমিক অবস্থায় তার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি জানান, শুধু মেয়ে হওয়ার কারণে একটি টিম থেকে তাকে বাদ দেওয়া হয়েছিল। পরে কারণ জানার পর, তীব্র প্রতিবাদে তাকে আবার সেই টিমে নেওয়া হয়। এভাবে নিজের যোগ্যতা একবার প্রমাণ করতে পারলেই দ্বিতীয় বাঁধা আসতে সময় নেবে এবং এভাবেই সব বাঁধা অতিক্রম করা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।
তিনি আরও জানান, পেশাগতভাবে একজন শিক্ষক হলেও তার একটা বড় কাজ হলো ছাত্রদের স্বপ্ন দেখানো। ক্যারিয়ার এর জন্য প্রস্তুত করার পাশাপাশি তাদের স্বপ্নের জায়গায় নিয়ে যাওয়া। এজন্য প্রত্যেককেই নিজেদের এফোর্ট দিতে হবে, এখনকার যুগে শুধু পড়ালেখা করে ভাল রেজাল্ট করে এগিয়ে যাওয়া যায় না। এর পাশাপশি আরও স্কিল ডেভেলপ করতে হয়। একটা স্কিলে অন্তত সবাইকে মাস্টার হতে হবে। যেটা পরে ক্যারিয়ার গড়তে সহযোগিতা করবে। কর্মক্ষেত্রে নিজেকে আলাদা করে আইডেন্টিফাই করতে পারবে। সেই টেকনিকটা নিজেকেই জানতে হবে।
রিজওয়ানা খান: ছাত্র জীবনেই চেয়েছেন বাবার ব্যবসার হাল ধরবেন। সে অনুযায়ী নিজেকে আপডেট করেছেন। উদ্যোক্তা হওয়ার ইচ্ছে থেকেই কম্পিউটার সায়েন্সে পড়তে গিয়ে ইকোনোমিক্স, বিজনেস বিষয়ক সাবজেক্টগুলোকে কিছুটা মাইনর হিসেবে রেখেছিলেন। পরে অবশ্য বিজনেস এর উপরে আরো পড়াশোনা করেছেন।
উদ্যোক্তা হিসেবে সফল হতে হলে যে জ্ঞানের দরকার সেগুলো শিখতে হয়েছে জানিয়ে রিজওয়ানা বলেন, টেকনোলজি জানলে ভাল প্রোগ্রামার হওয়া যাবে। কিন্তু ভাল উদ্যোক্তা হতে শুধু প্রোগ্রামিং জানলেই হবে না, ম্যানেজমেন্ট, সেলস এবং মার্কেটিংসহ বিজনেসের অন্য যে বিষয়গুলি আছে সেগুলোও খুবভালভাবে জানতে হবে। এছাড়া, বিজনেস এর ধরণ অনুযায়ী সব সময় নিজেকে আপডেট রাখতে এখনও অনেক কিছু শিখতে হচ্ছে।
রিজওয়ানা খান বলেন, ‘নিজেকে মেয়ে হিসেবে না দেখে আগে একজন মানুষ হিসেবে দেখতে শিখেছি। যে বাধাই আসবে সেটা নিয়ে নিজে কথা বলতে শিখতে হবে। কাজ দিয়ে যোগ্যতা প্রমাণ করতে জানতে হবে। মেয়ে হিসেবে বেশি সুবিধা পাওয়ার প্রবণতা বাদ দিতে হবে।’
শায়লা রাহমান: ক্যারিয়ারকে সফলভাবে এগিয়ে নিতে তিনটি জায়গায় অবশ্যই ফোকাস করতে হবে। ফ্যামেলি সাপোর্ট, নিজেকেই এফোর্ট দেওয়া (নিজের ধৈর্য্য ধরে রাখা এবং প্রতিদিন নিজেকে চ্যালেঞ্জ দেওয়া ও ধরে রাখা)। এবং কাজ করার পরিবেশ। এই তিনটি জিনিস নিজেকেই ম্যানেজ করতে জানতে হবে। তাহলেই নিজের ক্যারিয়ার তৈরিতে বা নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব।
সৈয়দা নাবিলা মাহবুব: মা আর দাদুর কাছ থেকেই তিনি নারী নেতৃত্বের গুণ পেয়েছেন। নেতৃত্বের জায়গায় আসতে হলে পরিবারের ভালবাসা বা সাপোর্টের দরকার হয়।
নাবিলা মাহবুব বলেন, কম্পিটিশন ছেলে বা মেয়ের সঙ্গে নয়! সব সময় নিজেই নিজের কম্পিটিটর হতে হবে। নিজেকে প্রমাণ করা, নিজেকে চ্যালেঞ্জ করা যে আজ থেকে তিন বছর পর নিজেকে কোথায় দেখতে চান। সিভি লেখা থেকে শুরু করে ইন্টারভিউ দেওয়া, সামনে এসে কথা বলা এই প্রত্যেকটি সুযোগ কাজে লাগাতে হবে। যারাই সামনে থেকে লিড দিয়ে যাচ্ছেন তারা নিজেদেরকে সব সময় চ্যালেঞ্জ করেছেন এবং নিজেদেরকে সব সময় বলেছেন আমরা আরও ভাল করতে পারবো! নিজেকে উন্নত করার এবং সব বাধা অতিক্রম করার এটিই একমাত্র পথ।
অনুষ্ঠানের প্রত্যেক বক্তার বক্তব্য থেকে উঠে আসে, মেয়েকে তার নিজের জন্য নিজেকেই আগে জাগতে হবে। তা না হলে আগানো সম্ভব নয়।