শ্রদ্ধেয় জাতীয় প্রফেসর ও প্রকৌশলী প্রয়াত জামিলুর রেজা চোধুরীর নামে প্রস্তুতকৃত আইওটি মাইক্রোকন্ট্রোলার ডিভাইস “JRC Board” কে কেন্দ্র করে ২৯-৩০শে অক্টোবর ২০২১ইং তারিখে কম্পিউটার সার্ভিসেস লিমিটেড , বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্ক এবং বাংলাদেশ ফ্লাইং ল্যাবস এর যৌথ আয়োজনে জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের মিলনায়তনে আয়োজিত হল দুই দিন ব্যাপী “সুবর্ণ জয়ন্তী হ্যাকাথন-২০২১”। আজ বিকেল ৪টায় বাংলাদেশ সরকারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান হ্যাকাথনের বিজয়ী ঘোষণার মাধ্যমে ৩৬ ঘন্টার হ্যাকাথনের সমাপ্তি টানেন।
হ্যাকাথনের চ্যাম্পিয়ন দল টিম ওয়ান জিরো’র সদস্য নূর-এ-জান্নাত, অর্পন চন্দ্র, মাজেদুল ইসলাম নাইম ও নিহাম দাস অঙ্কুশ, প্রথম রানার আপ টিম প্রোডিজি’র সদস্য তৌসিফ সামিন, ফারহান করিম, ফাইয়াজ আজমাইন ও মোঃ আবীর হোসাইন এবং দ্বিতীয় রানার হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন সাইবারট্রন টিমের মোঃ রাসেল খান হামীম ও মোঃ তামীমুল এহসান।
শিশু-কিশোর ও তরুণদের রোবটিক্স ও আইওটি এর প্রতি উৎসাহিত করতে এবং প্রাত্যহিক জীবন ও উৎপাদন শিল্পের মধ্যে মেলবন্ধন স্থাপন করে শিল্প বিপ্লব-৪.১ এর দিকে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবার উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে এই অনন্য আইওটি মাইক্রোকন্ট্রোলার ডিভাইস “JRC Board”। যার নকশা থেকে শুরু করে প্রস্তুতকরণ সবই হয়েছে বাংলাদেশে। এই মাইক্রোকন্ট্রোলার বোর্ড দিয়ে কেউ সাধারণ বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা থেকে শুরু করে অনেক জটিল প্রযুক্তিও বানাতে সক্ষম হবে।
সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক মাননীয় মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও লেখক অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল এবং বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি এর প্রেসিডেন্ট শহিদ-উল-মুনির। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ মুনির চৌধুরী এবং আয়োজনে স্বাগত বক্তব্য রাখেন কম্পিউটার সার্ভিসেস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মমলুক ছবির আহমেদ ।
স্বাগত বক্তব্যে কম্পিউটার সার্ভিসেস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মমলুক ছবির আহমেদ বলেন, আজ আমাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের দিন। কেননা যেই প্রয়োজন থেকে আমরা একটি মাইক্রোকন্ট্রোলার বোর্ড বানিয়েছি তার পরীক্ষামূলক পর্যবেক্ষনের পরে আজকে আমরা এর ব্যবহারিক প্রয়োগ দেখতে পারছি। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন জায়গায় প্রায় ১৭০০০ ছেলেমেয়েকে প্রশিক্ষণ দিয়েছি যার ফলাফল অতি শীঘ্রই আমরা দেখতে পারব।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নূর-এ-জান্নাত বলেন, প্রথমবারের মত নিজের দেশের তৈরী মাইক্রোকন্ট্রোলার বোর্ড দিয়ে কাজ করতে পারাটা আমাদের জন্য অত্যন্ত গর্বের। একই অভিমত ফুটে ওঠে আরেকজন অংশগ্রহণকারী আতিয়াব জোবায়েরের বক্তব্যে, “নিজের দেশের উদ্ভাবন নিয়ে কাজ করাতে অন্যরকম আবেগ কাজ করে এবং এই হ্যাকাথন আমাদের সেই সুযোগ করে দিয়েছে।
বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির প্রেসিডেন্ট শহিদ-উল-মুনির বলেন, ৩৬ ঘন্টা একটানা কাজ করেও অংশগ্রহণকারীদের মাঝে কোন ক্লান্তি দেখা যায়নি এবং তাদের মাঝে যে শেখার আগ্রহ তা আমাকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। এমন উদ্যোমী ছেলেমেয়েদের হাত ধরেই প্রযুক্তির আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের তৈরী মাইক্রোকন্ট্রোলার বোর্ড জনপ্রিয়তা অর্জন করবে বলে আমার বিশ্বাস।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, কোন দেশকে এগিয়ে নিতে এর মূল অবকাঠামো হচ্ছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে উন্নতি। আমি খুব দৃঢ় ভাবে বিশ্বাস করি যে বাংলাদেশ এই ক্ষেত্রে ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, আমাদের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে গিয়েও কোন ডিভাইস ধরা যেতনা, ব্যাবহারিক জ্ঞ্যান তো ভাবনার বাইরে। তবে এখন কার ছেলেমেয়েরা অনেকটা এগিয়ে। আমার খুব ভালো লেগেছে এই ভেবে যে শুধুমাত্র কম্পিউটার বাঁ তড়িৎকৌশ নয় অন্যান্য বিভাগ সহ এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলো কলেজের শিক্ষার্থীরাও। তিনি আরো বলেন, ইলেকট্রনিক্স নিয়ে কাজ করতে হলে খুব গুরুত্বপূর্ন একটা জিনিস হচ্ছে সার্কিট বোর্ড যা আগে আমাদেরকে ভিনদেশ থেকে কিনে আনতে হতো। গর্বের বিষয় হচ্ছে এখন আর অন্যদেশের বোর্ড দিয়ে আমাদের কষ্ট করে কাজ করতে হবেনা, নিজের ভাষায় নিজের দেশের তৈরী জিনিস দিয়েই আমরা এখন কাজ করতে পারবো।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাননীয় মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান বলেন, ছাত্র ছাত্রীদের কাজের মাঝেই আমি দেশের ভবিষ্যৎ দেখি। সারা পৃথিবীর সাথে প্রতিযোগিতা করতে হলে চাই জ্ঞানের চর্চা আর আজকের আয়োজনটি শিক্ষার্থীদের এমন সুযোগ করে দিয়েছে যা আমাকে আনন্দিত করেছে।
এ কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে JRC Board এর যাত্রা শুরু হল এবং এর অংশ হিসেবে পরবর্তীতে সারাদেশে রোবট-প্রিয় শিশু-কিশোরদের মাঝে এই বোর্ড ছড়িয়ে যাবে। কার্নিভাল ইন্টারনেট ও বিডি পিয়ার এর পৃষ্ঠপোষকতায় এবং জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের সহযোগীতায় এ হ্যাকাথন অনুষ্ঠিত হয়েছে। হ্যাকাথনে সারাদেশের ৮০০ টিরও অধিক দল থেকে পর্যায়ক্রমে বাছাইকৃত ১৩টি দল মূল পর্বে অংশগ্রহণ করছে। হোম অটোমেশন ও মনিটরিং, বিল্ডিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, এগ্রিকালচার ও ফার্মিং সমাধান, লাইব্রেরী ডেভেলপমেন্ট এন্ড ইমপ্লিমেন্টেশন, ম্যাস নেটওয়ার্কিং সিস্টেম ইমপ্লিমেন্টেশন, ইন্টারনেট অব থিংস -এইসকল সমস্যাগুলোকে লক্ষ্য করে JRC Board দিয়ে সমস্যার সমাধান করেছে হ্যাকাথনের অংশগ্রহণকারীরা। এছাড়াও ফ্লাইট কন্ট্রোলার ডেভেলপমেন্ট নামের একটি বিশেষ ক্যাটাগরিতে JRC Board ব্যাবহার করে একটি ড্রোন বানিয়ে দেখাতে হয়েছে অংশগ্রহণকারীদের।
চ্যাম্পিয়ন দল, প্রথম রানার আপ ও দ্বিতীয় রানার আপ দলসমূহ পর্যায়ক্রমে ৫০হাজার, ২৫ হাজার এবং ১৫ হাজার টাকা প্রাইজমানি হিসেবে পাবে। এছাড়াও সেরা ড্রোন নির্মাতার জন্য ছিল বাংলাদেশ ফ্লাইং ল্যাবস এর পক্ষ থেকে বিশেষ সহায়তা।