বিডিওএসএনকে আমি শুভেচ্ছা জানাচ্ছি মেয়েদের জন্য বিশেষ করে একটি আইসিটি উইক আয়োজন করার জন্য। এই বিশেষ আয়োজনের প্রয়োজন আছে কারণ এখনো আইসিটি সেক্টরে মেয়েদের পদচারণা অনেক কম।
আমি বুয়েটের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল (সিএসই) বিভাগে পড়াশোনা করে এই বিভাগে দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে শিক্ষকতা করছি। এর মধ্যে আমি উচ্চ শিক্ষার্থে যুক্তরাষ্ট্রে যাই। পুরো ব্যাচের মধ্যে হাতে গোনা কয়েকজন পিএইচডি করেছি। যা হয়তো ৫১০ জন ছাত্র-ছাত্রীর মধ্যে হাতে গোনা ৭/৮ জন মেয়ে PhD করেছেন। এইযে পরিচিত গন্ডি থেকে বেরিয়ে অবিবাহিতা অবস্থায় গবেষণা এবং উচ্চশিক্ষার জন্য দেশের বাইরে পা রাখা, এই পথটা মোটেও সহজ ছিল না। কারণ তখন ইন্টারনেটের অ্যাকসেস বা সহজপ্রাপ্য খুবই অপ্রতুল ছিল। পিএইচডি চলাকালীন আমি একাই সন্তানকে জন্ম দেই এবং বড় করতে থাকি। নানা প্রতিকূলতার মধ্যে আমি কিন্তু সাহস হারিয়ে পড়াটা ছেড়ে দেইনি।
আমি মনে করি বিজ্ঞান ও প্রকৌশল ক্ষেত্রগুলোতে মেয়েদের বিচরণ ও অগ্রগতি তুলনামূলকভাবে অনেক কম। তার অন্যতম কারণগুলো হচ্ছে, দক্ষতা অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ ও সময় না পাওয়া। সামাজিক সাপোর্ট না থাকা এবং মেয়েদের এগিয়ে আসার জন্য বিশেষ আর্থিক প্রণোদনা, স্কলারশীপ ও কোটা না থাকা।
দীর্ঘ কর্মজীবনে বিভিন্ন দেশের মেয়েদের সঙ্গে কাজ করা, কথা বলা ও ছাত্র-ছাত্রীদের মেন্টরিং, অ্যাডভাইজিং করার সুযোগ হয়েছে। আমি মনে করি, মেয়েদের সাহসী হতে হবে। কোনো কারণে পিছিয়ে পরলে ভয় না পেয়ে আবার কাজ শুরু করতে হবে। আইসিটি বা কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল এমনি একটি ক্ষেত্র যেখানে নিজেকে প্রতিনিয়ত স্কিল আপডেট, ট্রেইনিং, অনলাইন কোর্স, ওয়ার্কশপ এসবের মাধ্যমে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
আমি আমার ডিপার্টমেন্টে প্রথম নারী ফুল প্রফেসর হিসেবে যোগ দেই। দেশে বিদেশে বিভিন্ন কনফারেন্স, জার্নাল ও গবেষণার ফল প্রকাশের জন্য কাজ করি। সম্প্রতি বুয়েটের ট্রিপল ই ফ্যাকাল্টিতে আমি প্রথম নারী হেড বা বিভাগীয় প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পাই। এই পথচলায় আমি সবসময় একে অপরকে সাহায্য করি এবং আমিও সহযোগীতা পাই।
উল্লেখ্য, যে ২০১৪ সালে আমার কয়েকজন কলিগ মিলে উই আইসিটি নামে ওমেন ইন কম্পিুউটিং নামে একটি ওয়ার্কশপ আয়োজন করেছিলাম। ওয়ার্কশপটি খুবই জনপ্রিয়তা পায়। এই ধরণের আয়োজন এখন হর-হামেশাই করতে হবে। এবং বিজ্ঞান, প্রোগ্রামিং চর্চা ও গবেষণায় মেয়েদেরকে উৎসাহিত করতে হবে।
বিডিওএসএন আয়োজিত ‘লুনা শামসুদ্দোহা গার্লস ইন আইসিটি উইক’ এর সর্বাঙ্গীন সাফল্য কামনা করছি। প্রয়াত লুনা শামসুদ্দোহার সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় হয় উনি আমাকে ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ডে একটি প্রোগ্রামে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন স্পিকার হিসেবে। এরপর বিভিন্ন প্রোগ্রামে দেখা হয়েছে। ২০২০ এ বিডিওএসএনের একটি সম্মাননা প্রোগ্রামে ওনার কর্মকান্ড সম্পর্কে জানতে পারি। অনেকের সাথে আমরা দুজনেই আমন্ত্রিত ছিলাম। এই আইসিটি উইকের মাধ্যমে ওনাকে সম্মান জানানোর প্রয়াসকে স্বাগত জানাই।
মেয়েদের জন্য সবসময়ই আমি বলতে চাই, ‘থেমে থেকোনা, ঘাবড়িয়ে যেওনা, এগিয়ে চলো। পড়ে গেলে উঠে দাঁড়াও। পরিশেষে আমি প্রোগ্রামিং আইসিটিতে মেয়েদের বেশি বেশি অংশগ্রহণ আশা করে এই উদ্যোগের সাফল্য কামনা করছি।
- প্রতিবেদনটি লিখেছেন বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্কের(বিডিওএসএন) আওতাধীন ‘এনেবলিং সাস্টেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলস ফর বাংলাদেশ (ইএসডিজি৪বিডি)’ প্রকল্পের প্রজেক্ট ম্যানেজার, জাহানারা আমির