যে এগুবার তাকে থামাবার সাধ্য কার? গ্রামীণ ফোনের ডেপুটি ডিরেক্টর শায়লা রহমানকেও থামানো যায়নি। ভাগ্য দেবতা তাকে নানাভাবেই পরীক্ষা করে এখন মনে হয় ক্ষান্ত দিয়েছেন।
২০০৭ সাল থেকে গ্রামীণফোনে আছেন তিনি। ১৫ বছর পর পেছনের দিকে তাকিয়ে শুধু ভাবেন তিনি পেরেছেন। না এক লাইনে শেষ হয়ে যায় না শায়লা রহমানের পারার গল্প।
অনেক চ্যালেঞ্জিং ছিল সে সময়ের পরিবেশ। নারী হিসেবে প্রমাণ করা, কর্মী হিসেবে প্রমাণ করা। চাকরিজীবি হিসেবে পরিবারের কাছে প্রমাণ করা। এত প্রমাণের ভিড়ে তিনি হারিয়ে যাননি। শুধু নিজেকে বলেছেন, পারতে হবে। প্রতিনিয়ত নিজেকে চ্যালেঞ্জ দিয়ে দিয়ে এগিয়ে গেছেন তিনি।
২০০৭ সালের দিকে বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতে মেয়েদের সংখ্যা ছিল একেবারেই হাতে গোনা। যে সংখ্যা চোখে গুনে শেষ করা যায়। তা নিয়ে পুরুষদের ভ্রু-কুটি থাকবে তা বলাই বাহুল্য। অনেক চোখের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করা বেশ কঠিনই বলা যায় তার জন্য। সেখানে ধৈর্য্য ধরে নিজেকে প্রমাণ করতে হয়। অনেকেই হাল ছেড়ে দেন। তবে, শায়লা রহমান মনে করেন, এগিয়ে যাবার জন্য নিজের ইচ্ছাই সবচেয়ে বড় কথা।
তবে, শায়লার এই মানসিক দৃঢ়তার শুরু আরো আগে থেকে। ২০০৪ সালে পারিবারিকভাবে বিয়ের পর তুর্কি চলে যান স্বামী আরিফুর রহমানের সঙ্গে। কারণ বিয়ের আগে থেকে সেখানে ১০ বছর ধরে চাকরি করতেন তিনি। কিন্তু তুর্কিতে শায়লার ভাল লাগছিল না। দেশেই কাজ করবেন এমন ভাবনা থেকেই দেড় বছরের মাথায় দেশে ফিরে আসেন স্বামী-স্ত্রী। দেশে ফিরেই যোগ দেন বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন লিমিটেডে। বছরখানিক পর ২০০৭ সাল থেকে গ্রামীণ ফোনে ক্যারিয়ার শুরু করেন। পরিবারের সমর্থন আর নিজের ইচ্ছের ওপর ভরসা করে কাজ করে যান তিনি। নানা চ্যালেঞ্জ পার হয়ে এখন সবার ভরসার মানুষ তিনি।
জিপির (গ্রামীণ ফোন) বিভিন্ন শাখায় লিডারশিপ রোলে কাজ করেছেন তিনি। স্বীকৃতিস্বরুপ ২০১৯ সালে বাংলাদেশ ব্রান্ড ফোরাম তাকে ‘ইন্সপায়ারিং ওমেন ইন লিডারশিপ’ পুরস্কারে ভূষিত করে।
সংসার জীবনেও চড়াই উৎরাই গেছে তার। দেশে আসার পর হঠাৎ করেই অসুস্থ হয়ে যান স্বামী আরিফুর রহমান। সেই পরিস্থিতিতেও ভেঙে না পড়ে নিজের কাজ করে গেছেন শায়লা রহমান। জীবনের পেছনে তাকিয়ে সংগ্রামের দিনগুলোকে এখন দেখেন আশির্বাদ হিসেবে। তবে, স্বামী আরিফুর রহমানের কাছে আজীবনের জন্য কৃতজ্ঞ তিনি। কারণ, শুধু স্ত্রীর কথা চিন্তা করে নিজের দূর্দান্ত ক্যারিয়ার ফেলে ফিরে এসেছিলেন দেশে। শায়লার ভাষায়, এই ত্যাগের কোনো মূল্য হয় না। হয়তো এর নাম শ্রদ্ধা, সম্মান বা ভালবাসা।
সব সামলিয়ে শায়লা রহমানের এখন শুধু সামনে এগিয়ে যাওয়ার পালা। অন্যদের জন্য তার পরামর্শ, এগিয়ে যাওয়া বা লিডারশিপের জন্য শুধু অফিসের ওপর নির্ভর না করে নিজের শতভাগ এফোর্ট দিতে হয়। অফিস, পরিবার ছাড়া বাইরের পরিবেশের সঙ্গেও তাকে খাপ খাইয়ে নিতে হয়েছে নিজের এগিয়ে যাওয়ার ইচ্ছে থেকেই। তাই এগিয়ে যাওয়ার প্রথম মন্ত্র নিজের কাছেই বলে মন্তব্য করেন এই ডেপুটি ডিরেক্টর।
বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের অগ্রনী নারী লুনা শামসুদ্দোহা তার আদর্শ। এই খাতে আরো এগিয়ে যাওয়ার ভাবনায় নিজেকেও তিনি কল্পনা করেন তার মতোই।